শত্রুঘ্ন বিশাল সেনা নিয়ে মথুরার বাইরে অবস্থান করলো। সারি সারি ডিঙিতে যমুনা পার করে অযোধ্যার সেনারা মথুরার বাইরে অবস্থান করলো। অসুর সেনারা গিয়ে লবণকে সব জানালো। লবণ শুনে অট্টহাস্য করলো। বিশাল চেহারা, হস্ত- পদ তাল বৃক্ষের ন্যায়, মস্তক পর্বতের চূড়ার ন্যায়- এমন ভয়ানক ছিলো সে। অসুরেরা সকলে হাস্য করতে লাগলো। লবণ বলল- “আমাকে দেখে অযোধ্যা নরেশ শ্রীরাম এত ভীত হয়েছেন যে নিজে যুদ্ধে না এসে ভ্রাতাকে মরবার জন্য প্রেরণ করেছে। আমার মাতা কুম্ভীনসী ছিলেন রাবণের মাতৃকুলের ভগিনী। আমার মাতুল ছিলেন দশানন। আমার পিতা মধু দৈত্যের সাথে রাবণের মিত্রতা ছিলো। ঐ দুষ্ট রাম আমার দুই মাতুলকে বধ করে বিশ্বাসঘাতক মাতুল বিভীষণকে রাজা বানিয়েছে। ঐ রামের ভ্রাতা লক্ষ্মণ আমার মাসির অঙ্গহানি করেছে। আজ শত্রুঘ্ন কে বধ করে আমি সমস্ত প্রতিশোধ তুলবো।” এই বলে লবণ দন্ত কটমট করলো। আদেশ দিলো অসুরদের । অসুরেরা রণসাজে সজ্জিত হল । দামামা- শিঙা- তুরী- ভেরী বাজতে লাগলো। শত্রুঘ্ন এই দেখে অয্যোধ্যার সেনাদের বলল- “হে বীর সেনানিগণ। দেবতাদের সহিত অসুরদের বারংবার যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু মানব- অসুর যুদ্ধ এই প্রথম হচ্ছে। আর এই যুদ্ধে জয়ী হবো আমরা। মহারাজ শ্রীরামচন্দ্রের নাম স্মরণ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসুরদের ছিন্নভিন্ন করে দেবো আমরা। যুদ্ধে জয়ী হলে বীরের ন্যায় যশ- মান প্রাপ্তি করবো, আর নিহত হলেও ক্ষতি নেই, বীরগতি প্রাপ্ত করবো। এক সেনার মস্তকে হয় বীরত্বের মুকুট শোভা পায় নচেৎ বীরগতির শিরোপা শোভা পায়।” এই বলে শত্রুঘ্ন সকল সেনার মধ্যে উৎসাহ প্রদান করলো। লবণ দানব মহা সমারোহে সেই দিব্য ত্রিশূলের পূজা করলো। সেনাপতি বলল- “অসুর রাজ এই ত্রিশূল নিয়ে যুদ্ধে চলুন। এতেই সমস্ত শত্রু নাশ হবে।”
লবণ অসুর হাস্য করে বলল- “ঐ পতঙ্গ দিগকে বধ করতে এই দিব্য ত্রিশূলের প্রয়োজন নেই। তাহারা আমাকে দেখেই অর্ধেক ভয়ে মৃত হবে। বাকীদের পিষে পিষে বধ করবো।” এই বলে লবণ বিশাল অসুর সেনা নিয়ে চলল। মথুরার দ্বার খুলতেই হৈ হৈ করে অসুর সেনারা ধেয়ে এলো। অয্যোধ্যার সেনারা ছুটে গেলো। দুই দল মিলে মিশে গেলো। কেবল অস্ত্রের ঝঙ্কার, মৃত্যু চিৎকার ভিন্ন কিছুই সোনা গেলো না। চতুর্দিকে বাণ- বর্শা ছুটে ছুটে গেলো। ‘রাম’ নাম স্মরণ করে অয্যোধ্যার সেনারা অসুরদের ছিন্নভিন্ন করে দিতে লাগলো। এক পক্ষের হস্তী অন্য পক্ষকে পদদলিত করলো। গজের সাথে গজ- অশ্বারোহীর সাথে অশ্বারোহী- রথের সাথে রথ- পদাতিকের সাথে পদাতিক প্রচণ্ড যুদ্ধ হল। শত্রুঘ্ন উল্কা বাণ, জ্বালা বাণ নিক্ষেপ করতেই বাণ গুলি তাদের কার্যক্ষমতা প্রকাশ করলো। আগুনের গোলা পতিত হতে লাগলো অসুরদের উপরে। অসুরেরা পুরে ভস্ম হতে লাগলো। রক্তনদীর ধারা বেয়ে যমুনার কালো জলে মিশে রক্তবর্ণ ধারণ করলো। দেহের স্তূপ জমল। আকাশ কালো হয়ে গেলো বাণের প্রভাবে। সূচীমুখ, শিলামুখ, অগ্নিবাণ, পর্বত বাণ নিক্ষেপ করে শত্রুঘ্ন শত্রু সেনা নাশ করতে লাগলেন । পালটা অসুর রাজ লবণ কালবাণ, মরুত বাণ, যম বাণ, যক্ষ বাণ নিক্ষেপ করে অযোধ্যার সেনাদের বধ করতে লাগলেন । শত্রুঘ্ন বলল- “ওরে দুর্বুদ্ধি! আমি তোর সাথে যুদ্ধ করতে চাই। তুই সকলের শত্রু। আমি স্বর্গীয় সম্রাট দশরথের পুত্র তথা অযোধ্যা নৃপতি মহারাজ শ্রীরামচন্দ্রের ভাই। শত্রু নাশ করি বলে আমার নাম শত্রুঘ্ন। আয় আমার সহিত যুদ্ধ কর। আজ তুই বেঁচে ফিরবি না।” এই বলে শত্রুঘ্ন পর্বত বাণ ছুড়লো। বিশাল এক পর্বত আকাশ হতে অসুর সেনাদের ওপর নেমে আসতে লাগলো। অসুরেরা ছোটাছুটি আরম্ভ করলো। নিমিষে সেই পর্বত অসুরদের ওপর পতিত হলে অসংখ্য হস্তী, রথ, পদাদিক, অশ্বারোহী মাটিটে পিষে গেলো। অসুরেরা সংখ্যায় কমে গেলো।
লবণ বলল- “ওরে মূর্খ! আজ আমার সৌভাগ্য যে তুই এখানে এসেছিস। কারণ তোকে ভক্ষণ করতে পারবো। তোর অগ্রজ আমার মাতুলকে বধ করেছে। মাতুলের ঘাতকের ভাইকে আজ বধ করে মনের জ্বালা জুড়াবো। বহু পূর্বে আমার অযোধ্যা আক্রমণ করে এই কাজ করা উচিৎ ছিলো। তোকে বধ করে এই প্রতিশোধ নিলে আমার দুই মাতুলের আত্মা শান্তি পাবে।” এই বলে লবণ এক বৃক্ষ উপরে আনলো। বিশাল বৃক্ষ শত্রুঘ্নের দিকে নিক্ষেপ করলে শত্রুঘ্ন তীক্ষ্ণ বাণ দ্বারা সেই বৃক্ষ খণ্ডখণ্ড করে দিলো। ক্রোধে দন্ত কটমট করে লবণ অসুর পুনঃ একসাথে তিন চারটি বৃক্ষ উপরে এনে শত্রুঘ্নের দিকে ছুড়লো। শত্রুঘ্ন তিন চার বাণে সেই বৃক্ষ গুলি শত টুকরো করে দিলো। পুনঃ এক বৃক্ষ তুলে লবণ শত্রুঘ্নের মস্তকে আঘাত করলে শত্রুঘ্ন মূর্ছা গেলো। শত্রুঘ্ন নিহত হয়েছে দেখে লবণ আনন্দ করতে লাগলো। অপরদিকে অযোধ্যায় বসে শ্রীরামের বুক দুরুদুরু করতে লাগলো। অন্তরে অন্তরে মহাদেবের কাছে প্রার্থনা জানালেন- “হে ভোলেনাথ! সদয় হও। লবণ তোমার ভক্তই নয়। সে কেবল সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। সে রাবণের মতোই দুরাচারী। তাহার নাশের ব্যবস্থা করুন। আমার ভ্রাতা যেনো জয়ী হয়।” অপরদিকে বাল্মিকী আশ্রমে বসে সীতাদেবী তখন দুর্গা মাতার কাছে প্রার্থনা করে বলল- “মাতাঃ! যেমন তোমার কৃপায় রাবণ বধ সম্ভব হয়েছে সেই রূপ যেনো শত্রুঘ্নের হস্তে লবণ বধ হয়। শত্রুঘ্ন যেনো বিজয় প্রাপ্তি করে।” অপরদিকে লবণ অতি আনন্দিত হল শত্রুঘ্ন কে মূর্ছা যেতে দেখে। সে ভাবল শত্রুঘ্ন মরে গেছে। আনন্দে গর্জন করে বলল- “লবণ কে কেহ বধ করতে পারে না। সে অমর। এতদিনে আমার মাতুলের হত্যার প্রতিশোধ নিলাম। এবার অযোধ্যা আক্রমণ করে রাম, লক্ষ্মণ ও ভরতকে বধ করবো।”
( ক্রমশঃ )
লবণ অসুর হাস্য করে বলল- “ঐ পতঙ্গ দিগকে বধ করতে এই দিব্য ত্রিশূলের প্রয়োজন নেই। তাহারা আমাকে দেখেই অর্ধেক ভয়ে মৃত হবে। বাকীদের পিষে পিষে বধ করবো।” এই বলে লবণ বিশাল অসুর সেনা নিয়ে চলল। মথুরার দ্বার খুলতেই হৈ হৈ করে অসুর সেনারা ধেয়ে এলো। অয্যোধ্যার সেনারা ছুটে গেলো। দুই দল মিলে মিশে গেলো। কেবল অস্ত্রের ঝঙ্কার, মৃত্যু চিৎকার ভিন্ন কিছুই সোনা গেলো না। চতুর্দিকে বাণ- বর্শা ছুটে ছুটে গেলো। ‘রাম’ নাম স্মরণ করে অয্যোধ্যার সেনারা অসুরদের ছিন্নভিন্ন করে দিতে লাগলো। এক পক্ষের হস্তী অন্য পক্ষকে পদদলিত করলো। গজের সাথে গজ- অশ্বারোহীর সাথে অশ্বারোহী- রথের সাথে রথ- পদাতিকের সাথে পদাতিক প্রচণ্ড যুদ্ধ হল। শত্রুঘ্ন উল্কা বাণ, জ্বালা বাণ নিক্ষেপ করতেই বাণ গুলি তাদের কার্যক্ষমতা প্রকাশ করলো। আগুনের গোলা পতিত হতে লাগলো অসুরদের উপরে। অসুরেরা পুরে ভস্ম হতে লাগলো। রক্তনদীর ধারা বেয়ে যমুনার কালো জলে মিশে রক্তবর্ণ ধারণ করলো। দেহের স্তূপ জমল। আকাশ কালো হয়ে গেলো বাণের প্রভাবে। সূচীমুখ, শিলামুখ, অগ্নিবাণ, পর্বত বাণ নিক্ষেপ করে শত্রুঘ্ন শত্রু সেনা নাশ করতে লাগলেন । পালটা অসুর রাজ লবণ কালবাণ, মরুত বাণ, যম বাণ, যক্ষ বাণ নিক্ষেপ করে অযোধ্যার সেনাদের বধ করতে লাগলেন । শত্রুঘ্ন বলল- “ওরে দুর্বুদ্ধি! আমি তোর সাথে যুদ্ধ করতে চাই। তুই সকলের শত্রু। আমি স্বর্গীয় সম্রাট দশরথের পুত্র তথা অযোধ্যা নৃপতি মহারাজ শ্রীরামচন্দ্রের ভাই। শত্রু নাশ করি বলে আমার নাম শত্রুঘ্ন। আয় আমার সহিত যুদ্ধ কর। আজ তুই বেঁচে ফিরবি না।” এই বলে শত্রুঘ্ন পর্বত বাণ ছুড়লো। বিশাল এক পর্বত আকাশ হতে অসুর সেনাদের ওপর নেমে আসতে লাগলো। অসুরেরা ছোটাছুটি আরম্ভ করলো। নিমিষে সেই পর্বত অসুরদের ওপর পতিত হলে অসংখ্য হস্তী, রথ, পদাদিক, অশ্বারোহী মাটিটে পিষে গেলো। অসুরেরা সংখ্যায় কমে গেলো।
লবণ বলল- “ওরে মূর্খ! আজ আমার সৌভাগ্য যে তুই এখানে এসেছিস। কারণ তোকে ভক্ষণ করতে পারবো। তোর অগ্রজ আমার মাতুলকে বধ করেছে। মাতুলের ঘাতকের ভাইকে আজ বধ করে মনের জ্বালা জুড়াবো। বহু পূর্বে আমার অযোধ্যা আক্রমণ করে এই কাজ করা উচিৎ ছিলো। তোকে বধ করে এই প্রতিশোধ নিলে আমার দুই মাতুলের আত্মা শান্তি পাবে।” এই বলে লবণ এক বৃক্ষ উপরে আনলো। বিশাল বৃক্ষ শত্রুঘ্নের দিকে নিক্ষেপ করলে শত্রুঘ্ন তীক্ষ্ণ বাণ দ্বারা সেই বৃক্ষ খণ্ডখণ্ড করে দিলো। ক্রোধে দন্ত কটমট করে লবণ অসুর পুনঃ একসাথে তিন চারটি বৃক্ষ উপরে এনে শত্রুঘ্নের দিকে ছুড়লো। শত্রুঘ্ন তিন চার বাণে সেই বৃক্ষ গুলি শত টুকরো করে দিলো। পুনঃ এক বৃক্ষ তুলে লবণ শত্রুঘ্নের মস্তকে আঘাত করলে শত্রুঘ্ন মূর্ছা গেলো। শত্রুঘ্ন নিহত হয়েছে দেখে লবণ আনন্দ করতে লাগলো। অপরদিকে অযোধ্যায় বসে শ্রীরামের বুক দুরুদুরু করতে লাগলো। অন্তরে অন্তরে মহাদেবের কাছে প্রার্থনা জানালেন- “হে ভোলেনাথ! সদয় হও। লবণ তোমার ভক্তই নয়। সে কেবল সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। সে রাবণের মতোই দুরাচারী। তাহার নাশের ব্যবস্থা করুন। আমার ভ্রাতা যেনো জয়ী হয়।” অপরদিকে বাল্মিকী আশ্রমে বসে সীতাদেবী তখন দুর্গা মাতার কাছে প্রার্থনা করে বলল- “মাতাঃ! যেমন তোমার কৃপায় রাবণ বধ সম্ভব হয়েছে সেই রূপ যেনো শত্রুঘ্নের হস্তে লবণ বধ হয়। শত্রুঘ্ন যেনো বিজয় প্রাপ্তি করে।” অপরদিকে লবণ অতি আনন্দিত হল শত্রুঘ্ন কে মূর্ছা যেতে দেখে। সে ভাবল শত্রুঘ্ন মরে গেছে। আনন্দে গর্জন করে বলল- “লবণ কে কেহ বধ করতে পারে না। সে অমর। এতদিনে আমার মাতুলের হত্যার প্রতিশোধ নিলাম। এবার অযোধ্যা আক্রমণ করে রাম, লক্ষ্মণ ও ভরতকে বধ করবো।”
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন