শিবিরে বসে সকলে ভাবনা চিন্তা করছেন । কেন দুর্গা দেবী এত সদয় রাবণের ওপরে । এর ফলে রাবণকে বধ করা যাবে না । ভগবান শ্রীরাম বলছেন- “বোধ হয় রাবণ বধ অসম্ভব । কারণ যতদিন দেবী তাহাকে রক্ষা করবেন- ততক্ষণ ত্রিলোকের কোন শক্তি তাহার অন্ত করতে পারবে না । এতদূর এসে কি ফল হল? তীরে এসে তরী ডুবে গেলো। মিত্র বিভীষণ! তুমি বল কি উপায় ?” বিভীষণ মাথা নীচু করে বসে ছিলো। কিছুই বলার উপায় নেই । কি আর বলবেন? সেইসময় সেইস্থানে আবির্ভূত হলেন পিতামহ ব্রহ্মা। শ্রীরাম ও বিভীষণ, সুগ্রীব, জাম্বুবান, হনুমান, লক্ষ্মণ সকলে প্রজাপতিকে প্রণাম ও স্তবস্তুতি করলেন। জাম্বুবান গিয়ে বললেন- “পিতা! একি অনর্থ উপস্থিত ? কেনই ভগবতী সেই দুরাচারীকে রক্ষা করছেন?” প্রজাপতি ব্রহ্মা তখন পুত্র জাম্বুবানকে আলিঙ্গন ও স্নেহ প্রদান করে ভগবান শ্রীরামকে বললেন- “ হে রাম! আপনি সেই নারায়ণ! রাবন বধ করতেই আপনার এই রূপ ধারন। দেবী অম্বিকা রাবণকে বর প্রদান করেছেন যে যতদিন না রাবণ দেবীকে ত্যাগ করেন, দেবী ততদিন তাহাকে রক্ষা করবেন । আমরা দেবতারা বহু পূর্বে দেবীর বোধন করেছি। দেবী জানিয়েছেন, শ্রীরাম যেনো শুক্লপক্ষে অকালে দুর্গা পূজা করেন। এর ফলে দেবী ,আপনাকে আশীর্বাদ প্রদান করবেন। এই দেখে রাবণ ক্ষিপ্ত হয়ে দেবীকে ত্যাগ করবেন। তখন রাবণ কে কেও রক্ষা করতে পারবে না।” ভগবান শ্রীরাম বললেন- “প্রজাপতি! এখন দক্ষিণায়ন । শরত ঋতু । এই অবস্থায় দেবীর পূজা কিভাবে সম্ভব ?” ব্রহ্মা বললেন- “সেই জন্যই এই পূজায় দেবীর বোধন অর্থাৎ দেবীকে জাগ্রত করে পূজা করার বিধান প্রযোজ্য হল। দেবীকে একশত আটটি নীল পদ্ম দ্বারা পূজা করুন।” এই বলে প্রজাপতি ব্রহ্মা পরামর্শ দিয়ে প্রস্থান করলেন । সেই থেকে শরত ঋতুতে দুর্গা পূজার পূর্বে ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যাকালে বিল্ব বৃক্ষের শাখায় দেবীর বোধন করা হয় । ঐদিনের পূজা হয় ঘটে। তারপর আমন্ত্রণ ও অধিবাস হয় ।
বসন্ত ঋতুতে দুর্গা পূজায় দেবীর বোধনের আবশ্যক নেই। কারণ ফাল্গুন ও চৈত্র মাস উত্তরায়ণে পড়ে। এইসময় দেবতারা জাগ্রত থাকেন । ভগবান শ্রীরাম বললেন- “বেশ তাই হবে! আমি মহামায়ার আরাধনা করবো । দেখি ভগবতীর দয়া হয় কিনা!” আশ্বিন মাস। শরত ঋতু । প্রথম অকাল বোধন হয়েছিলো বর্তমানে শ্রীলঙ্কাতে । সেখানেই ভগবান শ্রীরাম পূজা করেছিলেন ভগবতী দুর্গা দেবীর। বানরেরা নানা বনজ পুস্প সংগ্রহ করে নিয়ে এলো । আর আনলো নানা বনজ মিষ্ট ফল ।
আচারেতে আরতি করিলা অধিবাস ।
বান্ধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
ভগবান শ্রীরাম নবপত্রিকা বাঁধলেন । নবপত্রিকা বলতে কদলী, কচু, হরিদ্রা , জয়ন্তী, বেল, দাড়িম, অশোক, মান ও ধান এই নয়টি গাছের চারাকে শ্বেত অপরাজিতার লতা দ্বারা বেষ্টন করে, এটিকে স্নান করিয়ে শাড়ী পড়িয়ে স্ত্রী মূর্তির আকৃতি দিয়ে গণেশের ডানে রেখে পূজা করা হয়। অনেকে এঁকে গণেশের বৌ বলেন- এটা ভুল ধারনা। গণেশের স্ত্রীর নাম রিদ্ধি, সিদ্ধি। কলা বৌ আসলে হলেন মা দুর্গার নয়টি রূপ । ঐ নয় গাছের চারাতে মা দুর্গা নয় রূপে অবস্থান করেন । কদলী তে দেবী ব্রহ্মাণী , কচুতে কালিকা , হরিদ্রাতে দুর্গা, জয়ন্তীতে দেবী কার্ত্তিকী , বেলে আছেন দেবী শিবা , দাড়িম্বে থাকেন দেবী রক্তদন্তিকা , অশোকের দেবী হলেন দেবী শোকরহিতা, মান গাছে থাকেন দেবী চামুণ্ডা ও ধানে থাকেন দেবী লক্ষ্মী। এঁনারা মহামায়ার বিভিন্ন অংশা । এইভাবে নবপত্রিকা স্থাপন করে ভগবান শ্রীরাম দেবীর ঘট স্থাপন করলেন । তারপর ধূপ- দ্বীপ প্রজ্বলিত করে নানা বনজ পুস্প দিয়ে ভগবতীকে পূজা করতে লাগলেন । বিবিধ ফলমূল উৎসর্গ করলেন । প্রার্থনা করলেন –
নমস্তে শর্বাণী, ঈশানী ইন্দ্রানী,
ঈশ্বরী ঈশ্বর- জায়া ।
অপর্ণা অভয়া, অন্নপূর্ণা জয়া,
মহেশ্বরী মহামায়া ।।
উগ্রচণ্ডা উমা, আশুতোষ – রমা ,
অপরাজিতা উর্বশী ।
রাজরাজেশ্বরী ভীমা ভয়ঙ্করী
শঙ্করী শিবা ষোড়শী ।।
মাতঙ্গী বগলা , কল্যাণী কমলা,
সর্ব বিশ্বোদরী , শুভে শুভঙ্করী ,
ক্ষিতি ক্ষেত্র ক্ষেমঙ্করী ।।
সহস্র সুহস্তে, ভীমা ছিন্নমস্তে ,
মাতা মহিষ মর্দিনী ।
নিস্তার কারিণী, নরক বারিণী,
নিশুম্ভ শুম্ভ ঘাতিনী ।।
দৈত্য নিকৃন্তিনী, শিব সীমন্তনী,
শৈলসুতা সুবদনী ।
বিরিঞ্চি বন্দিনী , দুষ্ট নিস্কন্দিনী,
দিগম্বরের ঘরণী ।।
দেবী দিগম্বরী, দুর্গে দুর্গে – অরি,
কালী করালবেশী ।
শিবে শবারূঢ়া, চণ্ডী চন্দ্রচূড়া,
ঘোররূপা এলোকেশী ।।
সর্বসুশেভিনী ত্রৈলোক্যমোহিনী,
নমস্তে লোল রসনা ।
নমো দিগ্বসনা , সর্ব শবাসনা ,
বিশ্বা বিকট দশনা ।।
সারদা বরদা, শুভদা সুখদা,
অন্নদা মোক্ষদা শ্যামা ।
মৃগেশ বাহিনী, মহেশ ভাবিনী,
সুরেশ বন্দিতা বামা ।।
কামাখ্যা রুদ্রাণী, হর হর রাণী,
হর রমা কাত্যায়নী ।
শমন ত্রাসিনী, অরিষ্ট নাশিনী,
দয়াময়ী দাক্ষায়নী ।।
হের মা পার্বতী, আমি দীন অতি,
আপদে পড়েছি বড় ।
সর্বদা চঞ্চল, পদ্ম পত্র জল,
ভয়ে ভীত জড়সড় ।।
বিপদে আমার, না হয় তোমার ,
বিড়ম্বনা করা আর ।
মম প্রতি দয়া, কর গো অভয়া,
ভবার্ণবে কর পার ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এই বলে ভগবান শ্রীরাম হনুমানকে আদেশ দিলেন একশো আট নীল পদ্ম আনয়ন করতে । বললেন- “পবন নন্দন। তুমি গুণে গুণে একশো আট নীল পদ্ম আনয়ন করবে। দেখো বাছা গুনে এনো। কম যেনো এনো না।” হনুমান নিমিষে উড়ে গেলো। তারপর গুনে গুনে একশত আটটি নীল পদ্ম এনে হাজির করলো। ভগবান শ্রীরাম সেই দিয়ে পূজা করতে লাগলেন ।
( ক্রমশঃ )
বসন্ত ঋতুতে দুর্গা পূজায় দেবীর বোধনের আবশ্যক নেই। কারণ ফাল্গুন ও চৈত্র মাস উত্তরায়ণে পড়ে। এইসময় দেবতারা জাগ্রত থাকেন । ভগবান শ্রীরাম বললেন- “বেশ তাই হবে! আমি মহামায়ার আরাধনা করবো । দেখি ভগবতীর দয়া হয় কিনা!” আশ্বিন মাস। শরত ঋতু । প্রথম অকাল বোধন হয়েছিলো বর্তমানে শ্রীলঙ্কাতে । সেখানেই ভগবান শ্রীরাম পূজা করেছিলেন ভগবতী দুর্গা দেবীর। বানরেরা নানা বনজ পুস্প সংগ্রহ করে নিয়ে এলো । আর আনলো নানা বনজ মিষ্ট ফল ।
আচারেতে আরতি করিলা অধিবাস ।
বান্ধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
ভগবান শ্রীরাম নবপত্রিকা বাঁধলেন । নবপত্রিকা বলতে কদলী, কচু, হরিদ্রা , জয়ন্তী, বেল, দাড়িম, অশোক, মান ও ধান এই নয়টি গাছের চারাকে শ্বেত অপরাজিতার লতা দ্বারা বেষ্টন করে, এটিকে স্নান করিয়ে শাড়ী পড়িয়ে স্ত্রী মূর্তির আকৃতি দিয়ে গণেশের ডানে রেখে পূজা করা হয়। অনেকে এঁকে গণেশের বৌ বলেন- এটা ভুল ধারনা। গণেশের স্ত্রীর নাম রিদ্ধি, সিদ্ধি। কলা বৌ আসলে হলেন মা দুর্গার নয়টি রূপ । ঐ নয় গাছের চারাতে মা দুর্গা নয় রূপে অবস্থান করেন । কদলী তে দেবী ব্রহ্মাণী , কচুতে কালিকা , হরিদ্রাতে দুর্গা, জয়ন্তীতে দেবী কার্ত্তিকী , বেলে আছেন দেবী শিবা , দাড়িম্বে থাকেন দেবী রক্তদন্তিকা , অশোকের দেবী হলেন দেবী শোকরহিতা, মান গাছে থাকেন দেবী চামুণ্ডা ও ধানে থাকেন দেবী লক্ষ্মী। এঁনারা মহামায়ার বিভিন্ন অংশা । এইভাবে নবপত্রিকা স্থাপন করে ভগবান শ্রীরাম দেবীর ঘট স্থাপন করলেন । তারপর ধূপ- দ্বীপ প্রজ্বলিত করে নানা বনজ পুস্প দিয়ে ভগবতীকে পূজা করতে লাগলেন । বিবিধ ফলমূল উৎসর্গ করলেন । প্রার্থনা করলেন –
নমস্তে শর্বাণী, ঈশানী ইন্দ্রানী,
ঈশ্বরী ঈশ্বর- জায়া ।
অপর্ণা অভয়া, অন্নপূর্ণা জয়া,
মহেশ্বরী মহামায়া ।।
উগ্রচণ্ডা উমা, আশুতোষ – রমা ,
অপরাজিতা উর্বশী ।
রাজরাজেশ্বরী ভীমা ভয়ঙ্করী
শঙ্করী শিবা ষোড়শী ।।
মাতঙ্গী বগলা , কল্যাণী কমলা,
সর্ব বিশ্বোদরী , শুভে শুভঙ্করী ,
ক্ষিতি ক্ষেত্র ক্ষেমঙ্করী ।।
সহস্র সুহস্তে, ভীমা ছিন্নমস্তে ,
মাতা মহিষ মর্দিনী ।
নিস্তার কারিণী, নরক বারিণী,
নিশুম্ভ শুম্ভ ঘাতিনী ।।
দৈত্য নিকৃন্তিনী, শিব সীমন্তনী,
শৈলসুতা সুবদনী ।
বিরিঞ্চি বন্দিনী , দুষ্ট নিস্কন্দিনী,
দিগম্বরের ঘরণী ।।
দেবী দিগম্বরী, দুর্গে দুর্গে – অরি,
কালী করালবেশী ।
শিবে শবারূঢ়া, চণ্ডী চন্দ্রচূড়া,
ঘোররূপা এলোকেশী ।।
সর্বসুশেভিনী ত্রৈলোক্যমোহিনী,
নমস্তে লোল রসনা ।
নমো দিগ্বসনা , সর্ব শবাসনা ,
বিশ্বা বিকট দশনা ।।
সারদা বরদা, শুভদা সুখদা,
অন্নদা মোক্ষদা শ্যামা ।
মৃগেশ বাহিনী, মহেশ ভাবিনী,
সুরেশ বন্দিতা বামা ।।
কামাখ্যা রুদ্রাণী, হর হর রাণী,
হর রমা কাত্যায়নী ।
শমন ত্রাসিনী, অরিষ্ট নাশিনী,
দয়াময়ী দাক্ষায়নী ।।
হের মা পার্বতী, আমি দীন অতি,
আপদে পড়েছি বড় ।
সর্বদা চঞ্চল, পদ্ম পত্র জল,
ভয়ে ভীত জড়সড় ।।
বিপদে আমার, না হয় তোমার ,
বিড়ম্বনা করা আর ।
মম প্রতি দয়া, কর গো অভয়া,
ভবার্ণবে কর পার ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এই বলে ভগবান শ্রীরাম হনুমানকে আদেশ দিলেন একশো আট নীল পদ্ম আনয়ন করতে । বললেন- “পবন নন্দন। তুমি গুণে গুণে একশো আট নীল পদ্ম আনয়ন করবে। দেখো বাছা গুনে এনো। কম যেনো এনো না।” হনুমান নিমিষে উড়ে গেলো। তারপর গুনে গুনে একশত আটটি নীল পদ্ম এনে হাজির করলো। ভগবান শ্রীরাম সেই দিয়ে পূজা করতে লাগলেন ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন