রাবণের মুখ থেকে এমন ব্রহ্মজ্ঞানীর ন্যায় কথা শুনে বানরেরা সকলে অবাক হল । আসতে আসতে রাবণের ভেতরে সেই ব্রাহ্মণ বেরিয়ে এলো। কারণ প্রভুর শরে তাঁর সকল পাপ যে খণ্ডন হয়েছিলো। পাপ , অধর্ম দূর হলে থাকে কেবল পুন্য আর ধর্ম । রাবণ বলল- “হে লক্ষ্মণ! মানব তাঁর ক্ষুদ্র বুদ্ধি দিয়ে অহং বশত এটাই ভাবে যে সে সব সম্পত্তির প্রভু। সে সারা জীবনে ইহাই ভোগ করবে। কিন্তু দিবারাত্রের মতো মানব এর জীবনে সুখ- দুঃখ আসে। আর সে ভুলেও ঈশ্বরের শরণাগত হয় না। অন্তিমে মৃত্যু আসে। মৃত্যু সবারই হয়। অতি ধনী রাজারও মৃত্যু আসে, দরিদ্র ভিক্ষুকেরও মৃত্যু আসে। জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে মানব সেই মৃত্যুর দিকেই ধাবমান হয়। অমর কেউ হয় না। যে অমর হতে চায়- তার অবস্থা আমার ন্যায়ই হয়ে থাকে।” লক্ষ্মণ বলল- “হে বেদজ্ঞ পণ্ডিত! আপনি এবার রাজধর্ম ও সংসারধর্মের কথা বলুন।” রাবণ বলল- “হে লক্ষ্মণ! শ্রবণ করো। রাজার কর্তব্য গো- ব্রাহ্মণ- শাস্ত্র – নারী ও প্রজাদের রক্ষা করা। যে রাজা কেবল সুখ ভোগ করবার মানসিকতা পোষোণ করে সে পশুতুল্য । রাজার কর্তব্য প্রজাদের সুখ সমৃদ্ধি ঘটানো। প্রজার সুখের জন্য নিজের সুখকে বলি দেওয়া। ব্রাহ্মণ কে ভূমি, গো, সম্পদ দান করা। শত্রুর কবল থেকে প্রজাদিগের রক্ষা করা। রাজার কাছে তার রাজ্যই সংসার এবং সমস্ত প্রজা সেই সংসারের সদস্য। রাজার ব্যক্তিগত সংসার বলে কিছু হয় না। প্রজা হলেন রাজার সন্তান আর প্রজার কাছে রাজা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি। রাজদ্রোহ করার অর্থ ঈশ্বরের বিরোধিতা, আর প্রজা নিপীড়ন করার অর্থ নিজ সন্তানকে হত্যা করা। রাজাকে তার বৈবাহিক সংসার অপেক্ষা রাজ্যসংসারেই মনোনিবেশ করা উচিৎ। প্রয়োজনে সংসার ত্যাগ করেও প্রজাদের সেবা করা উচিৎ। কারণ প্রজাদের উন্নতি করলে একটি গোষ্ঠীর উন্নতি হয়। একটি গোষ্ঠী তৃপ্ত হলে সমগ্র রাজ্য তৃপ্ত হয়। যেই রাজ্যে ব্রাহ্মণেরা দান না পায়, যেই রাজ্যে প্রজারা রোদন করে, যেই রাজ্যে একটি নারীও যদি রোদন করে – সেই রাজ্য হতে দেবতারা বিদায় লন। যেমন সতী নারী সীতার চোখের জল আমার সমস্ত সাম্রাজ্যকে শোকের সাগরে নিমজ্জিত করেছে।”
লক্ষ্মণ বললেন- “হে পণ্ডিত দশানন! আপনার উপদেশে আমার যথার্থ জ্ঞান লাভ হয়েছে। কৃপা করে এবার সমাজধর্ম সম্বন্ধে বলুন।” রাবণ বললেন- “লক্ষ্মণ! শ্রবণ করো। সমাজে বর্ণাশ্রম ধর্মকে রক্ষা করা রাজার দায়িত্ব। নচেৎ রাজ্যে বিশৃঙ্খলা উৎপন্ন হয়। বৈদিক বিধানে ব্রাহ্মণ পূজা- পাঠ- যাগ- যজ্ঞ করবেন – ব্রাহ্মণের কর্তব্য এটাই । ক্ষত্রিয় সম্রাট যুদ্ধ করে রাজ্য রক্ষা করবেন । ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য গো- ব্রাহ্মণ- শাস্ত্র ও নারীকে রক্ষা করা। বৈশ্য ব্যবসা বাণিজ্য করে রাজাকে পারিশ্রামিক দিয়ে রাজাকে খুশী রাখবেন। প্রয়োজনে বৈশ্যেরা অস্ত্র ধারণ করবেন। আর শূদ্রের কর্তব্য হল এই তিন বর্ণের সেবা করা । বর্ণাশ্রম ধর্ম নষ্ট হলে সমাজ ধ্বংস হয়। আমি নিজে ব্রাহ্মণ পুত্র হয়ে এই বিধান অস্বীকার করেছিলাম, তাই আমার এই পরিস্থিতি। আমার কর্তব্য ছিলো পিতা বিশ্বশ্রবার আশ্রমে থেকে ধর্ম, শাস্ত্র অধ্যয়ন করা। কিন্তু আমি সেটা করিনি। আমার ভ্রাতা বিভীষণ সেটা করে নিজ উন্নতি সাধন করেছে। অপরদিকে শ্রীরাম যুদ্ধবিদ্যা দ্বারা ক্ষত্রিয়ের ধর্ম পালন করে আমার ন্যায় দুষ্টের বিনাশ করে জগতে পূজিত হবেন । যদি বর্ণাশ্রম ধর্ম শূদ্রেও পালন করে তবে সেই পূজ্য ও সম্মানীয় হয়ে থাকেন।” এই বলতে রাবণের মুখ দিয়ে রক্ত উঠে বুক ভেসে গেলো। বুঝলেন ধীরে ধীরে মৃত্যু এগিয়ে আসছে। লক্ষ্মণ বললেন- “হে পণ্ডিত! আপনার চরণে প্রণাম জানাই। সত্যই আপনি এক অমূল্য উপদেশ করলেন।” তখন দশানন করজোড়ে শ্রীরামকে প্রণাম করে বললেন- “হে শ্রীরাম! আমি জানিনা আপনি কে! আপনি কোন শক্তি রাখেন। নাহলে আমাকে হত্যা করে ত্রিলোকে কে এমন আছে ? কে আপনি? কৃপা করে পরিচয় দিন।” ভগবান শ্রীরাম বললেন- “রাবণ! তুমি অভিশপ্ত হয়ে রাক্ষস হয়েছো। তোমার দ্বিতীয় বার শাপমুক্তি ঘটেছে। তুমি আর কুম্ভকর্ণ আমার অতি প্রিয় ভক্ত ছিলে। দর্শন করো- দেখো আমি কে?” এই বলতে বলতে রাবণ দেখলেন শ্রীরামের স্থানে স্বয়ং বৈকুণ্ঠের নারায়ণ । নীল বর্ণ, গলে বনমালা ও কৌস্তভ মুনি ও ব্রাহ্মণ ভৃগু মুনির পদচিহ্ন, নানা অলঙ্কারে সুশোভিত শ্রীহরি । হস্তে চক্র, শঙ্খ , গদা, পদ্ম শোভিত । পদ্মের ন্যায় নয়ন। ভগবান বিষ্ণুর শরীর থেকে নানা দিব্যজ্যোতি নির্গত হচ্ছে। ভগবানের মস্তকে শেষ নাগ ফণা মেলে ছত্র ধরেছে, দেবতারা অবিরত স্তবস্তুতি করছেন। এইভাবে একঝলক দেখে রাবণ আবার সামনে দেখলেন শ্রীরামকে। শ্রীরাম বললেন- “তুমি এবং তোমার ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ পূর্বে বৈকুণ্ঠের দ্বারপাল ছিলে। সনকাদি চার ঋষির অভিশাপে শত্রু রূপে সত্য যুগেও জন্ম নিয়েছো। এই যুগেও জন্ম নিলে। আগামী দুই যুগেও জন্ম নেবে শত্রু রূপেই। তোমাদের মুক্তি ঘটাতে আমিও আগামী দুই যুগে অবতার গ্রহণ করবো।”
রাবণ দেখলো তাঁর সম্মুখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। শ্বাস প্রবল হচ্ছে। রাবণ বলল- “প্রভু! আপনি অত্যন্ত দয়াবান। আমার মুক্তির জন্যই আপনি ধরাধামে এসে এত কষ্ট ক্লেশ সহ্য করেছেন। আপনাকে প্রণাম জানাই। প্রভু! এবার আমার ধরিত্রী ত্যাগের সময় এসেছে। আমার অন্তিম প্রণাম স্বীকার করুন।” এই শুনে ভগবান শ্রীরাম, রাবণের মস্তকে হস্ত রাখলেন । ‘রাম’ নাম উচ্চারন করতে করতে রাবণ দেহ রাখলেন । রাবণের মৃত্যু হতেই আকাশ হতে পুস্প বৃষ্টি করতে লাগলেন দেবতা বৃন্দ। চতুর্দিকে নানা মঙ্গল বাদ্য বেজে উঠলো। বানরেরা উল্লাসে নানান বাদ্য বাজাতে লাগালো। সে সময় গগন হতে দেবরাজ ইন্দ্র বলল- “হে প্রভু শ্রীরাম ! আপনি দেবতাদের শত্রু রাবণের অন্ত করে আমাদের ওপর অশেষ করুণা করেছেন । এই আসুরিক শক্তির নাশের কারণে আমরা অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছি। জানি আপনি ত্রিলোকের প্রভু। কিন্তু এই সময় আপনি মানব রূপে অবতীর্ণ। আপনার কৃপাতেই দেবতারা ঐশ্বর্য শালী। আপনাকে কিছু প্রদান করা ধৃতষ্টা হবে। কারণ সবই আপনার সৃষ্টি। কিন্তু প্রভু! দেবতাদের অর্ঘ ভেবে আপনি আমাদের থেকে কিছু গ্রহন করুন। আপনাকে কিছু প্রদান করতে চাই।” ভগবান শ্রীরাম তখন দেবতাদের প্রণাম করে বললেন- “হে সুরবৃন্দ! আপনারা যেভাবে দিব্যাস্ত্র, ধনুক, রথ দিয়ে আমাকে সহায়তা করেছেন আমি তার জন্য কৃতার্থ । যদি আমাকে কিছু দিতে হয়, তবে এই যুদ্ধ শুরু থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত যত বানর- ভল্লুক- মর্কট- লাঙুর মারা গেছে, সকলকে জীবন প্রদান করুন।” ইন্দ্রদেবতা বললেন- “তথাস্তু! তাই হবে।” ব্রহ্মা আদি সব মিলে পঞ্চভূতের দ্বারা পুনঃ সেই সকল নিহত বানর- ভল্লুক- মর্কট- লাঙুর দের দেহ তৈরী করে অমৃত সিঞ্চন করে জীবিত করলেন। বানরদের আর উল্লাস দেখে কে? নিহত দের ফিরে পেতেই “হুপ”, “হুপ” শব্দ করে নৃত্য, আলিঙ্গন করে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলো । রাক্ষস দের নিথর দেহ থেকে তারা স্বর্ণ অলঙ্কার, কীরিট খুলে নিতে লাগলো। পশু জাতি নিজেরাই সেই সকল অলঙ্কার ধারণ করে অতি আনন্দে লম্ফ ঝম্ফ করতে লাগলো। ত্রিজটা গিয়ে সংবাদ দিলো- “পুত্রী সীতা! তোমার কষ্টের জীবন সমাপন হয়েছে। তোমার স্বামী শ্রীরামে শরে রাবণ নিহত হয়েছে। এবার কেউ তোমাকে লঙ্কায় বন্দী করে রাখতে পারবে না। শীঘ্র তুমি স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পারবে।” শুনে সীতাদেবী অনেক খুশী হলেন। মাতা ত্রিজটাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলেন ।
( ক্রমশঃ )
লক্ষ্মণ বললেন- “হে পণ্ডিত দশানন! আপনার উপদেশে আমার যথার্থ জ্ঞান লাভ হয়েছে। কৃপা করে এবার সমাজধর্ম সম্বন্ধে বলুন।” রাবণ বললেন- “লক্ষ্মণ! শ্রবণ করো। সমাজে বর্ণাশ্রম ধর্মকে রক্ষা করা রাজার দায়িত্ব। নচেৎ রাজ্যে বিশৃঙ্খলা উৎপন্ন হয়। বৈদিক বিধানে ব্রাহ্মণ পূজা- পাঠ- যাগ- যজ্ঞ করবেন – ব্রাহ্মণের কর্তব্য এটাই । ক্ষত্রিয় সম্রাট যুদ্ধ করে রাজ্য রক্ষা করবেন । ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য গো- ব্রাহ্মণ- শাস্ত্র ও নারীকে রক্ষা করা। বৈশ্য ব্যবসা বাণিজ্য করে রাজাকে পারিশ্রামিক দিয়ে রাজাকে খুশী রাখবেন। প্রয়োজনে বৈশ্যেরা অস্ত্র ধারণ করবেন। আর শূদ্রের কর্তব্য হল এই তিন বর্ণের সেবা করা । বর্ণাশ্রম ধর্ম নষ্ট হলে সমাজ ধ্বংস হয়। আমি নিজে ব্রাহ্মণ পুত্র হয়ে এই বিধান অস্বীকার করেছিলাম, তাই আমার এই পরিস্থিতি। আমার কর্তব্য ছিলো পিতা বিশ্বশ্রবার আশ্রমে থেকে ধর্ম, শাস্ত্র অধ্যয়ন করা। কিন্তু আমি সেটা করিনি। আমার ভ্রাতা বিভীষণ সেটা করে নিজ উন্নতি সাধন করেছে। অপরদিকে শ্রীরাম যুদ্ধবিদ্যা দ্বারা ক্ষত্রিয়ের ধর্ম পালন করে আমার ন্যায় দুষ্টের বিনাশ করে জগতে পূজিত হবেন । যদি বর্ণাশ্রম ধর্ম শূদ্রেও পালন করে তবে সেই পূজ্য ও সম্মানীয় হয়ে থাকেন।” এই বলতে রাবণের মুখ দিয়ে রক্ত উঠে বুক ভেসে গেলো। বুঝলেন ধীরে ধীরে মৃত্যু এগিয়ে আসছে। লক্ষ্মণ বললেন- “হে পণ্ডিত! আপনার চরণে প্রণাম জানাই। সত্যই আপনি এক অমূল্য উপদেশ করলেন।” তখন দশানন করজোড়ে শ্রীরামকে প্রণাম করে বললেন- “হে শ্রীরাম! আমি জানিনা আপনি কে! আপনি কোন শক্তি রাখেন। নাহলে আমাকে হত্যা করে ত্রিলোকে কে এমন আছে ? কে আপনি? কৃপা করে পরিচয় দিন।” ভগবান শ্রীরাম বললেন- “রাবণ! তুমি অভিশপ্ত হয়ে রাক্ষস হয়েছো। তোমার দ্বিতীয় বার শাপমুক্তি ঘটেছে। তুমি আর কুম্ভকর্ণ আমার অতি প্রিয় ভক্ত ছিলে। দর্শন করো- দেখো আমি কে?” এই বলতে বলতে রাবণ দেখলেন শ্রীরামের স্থানে স্বয়ং বৈকুণ্ঠের নারায়ণ । নীল বর্ণ, গলে বনমালা ও কৌস্তভ মুনি ও ব্রাহ্মণ ভৃগু মুনির পদচিহ্ন, নানা অলঙ্কারে সুশোভিত শ্রীহরি । হস্তে চক্র, শঙ্খ , গদা, পদ্ম শোভিত । পদ্মের ন্যায় নয়ন। ভগবান বিষ্ণুর শরীর থেকে নানা দিব্যজ্যোতি নির্গত হচ্ছে। ভগবানের মস্তকে শেষ নাগ ফণা মেলে ছত্র ধরেছে, দেবতারা অবিরত স্তবস্তুতি করছেন। এইভাবে একঝলক দেখে রাবণ আবার সামনে দেখলেন শ্রীরামকে। শ্রীরাম বললেন- “তুমি এবং তোমার ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ পূর্বে বৈকুণ্ঠের দ্বারপাল ছিলে। সনকাদি চার ঋষির অভিশাপে শত্রু রূপে সত্য যুগেও জন্ম নিয়েছো। এই যুগেও জন্ম নিলে। আগামী দুই যুগেও জন্ম নেবে শত্রু রূপেই। তোমাদের মুক্তি ঘটাতে আমিও আগামী দুই যুগে অবতার গ্রহণ করবো।”
রাবণ দেখলো তাঁর সম্মুখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। শ্বাস প্রবল হচ্ছে। রাবণ বলল- “প্রভু! আপনি অত্যন্ত দয়াবান। আমার মুক্তির জন্যই আপনি ধরাধামে এসে এত কষ্ট ক্লেশ সহ্য করেছেন। আপনাকে প্রণাম জানাই। প্রভু! এবার আমার ধরিত্রী ত্যাগের সময় এসেছে। আমার অন্তিম প্রণাম স্বীকার করুন।” এই শুনে ভগবান শ্রীরাম, রাবণের মস্তকে হস্ত রাখলেন । ‘রাম’ নাম উচ্চারন করতে করতে রাবণ দেহ রাখলেন । রাবণের মৃত্যু হতেই আকাশ হতে পুস্প বৃষ্টি করতে লাগলেন দেবতা বৃন্দ। চতুর্দিকে নানা মঙ্গল বাদ্য বেজে উঠলো। বানরেরা উল্লাসে নানান বাদ্য বাজাতে লাগালো। সে সময় গগন হতে দেবরাজ ইন্দ্র বলল- “হে প্রভু শ্রীরাম ! আপনি দেবতাদের শত্রু রাবণের অন্ত করে আমাদের ওপর অশেষ করুণা করেছেন । এই আসুরিক শক্তির নাশের কারণে আমরা অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছি। জানি আপনি ত্রিলোকের প্রভু। কিন্তু এই সময় আপনি মানব রূপে অবতীর্ণ। আপনার কৃপাতেই দেবতারা ঐশ্বর্য শালী। আপনাকে কিছু প্রদান করা ধৃতষ্টা হবে। কারণ সবই আপনার সৃষ্টি। কিন্তু প্রভু! দেবতাদের অর্ঘ ভেবে আপনি আমাদের থেকে কিছু গ্রহন করুন। আপনাকে কিছু প্রদান করতে চাই।” ভগবান শ্রীরাম তখন দেবতাদের প্রণাম করে বললেন- “হে সুরবৃন্দ! আপনারা যেভাবে দিব্যাস্ত্র, ধনুক, রথ দিয়ে আমাকে সহায়তা করেছেন আমি তার জন্য কৃতার্থ । যদি আমাকে কিছু দিতে হয়, তবে এই যুদ্ধ শুরু থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত যত বানর- ভল্লুক- মর্কট- লাঙুর মারা গেছে, সকলকে জীবন প্রদান করুন।” ইন্দ্রদেবতা বললেন- “তথাস্তু! তাই হবে।” ব্রহ্মা আদি সব মিলে পঞ্চভূতের দ্বারা পুনঃ সেই সকল নিহত বানর- ভল্লুক- মর্কট- লাঙুর দের দেহ তৈরী করে অমৃত সিঞ্চন করে জীবিত করলেন। বানরদের আর উল্লাস দেখে কে? নিহত দের ফিরে পেতেই “হুপ”, “হুপ” শব্দ করে নৃত্য, আলিঙ্গন করে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলো । রাক্ষস দের নিথর দেহ থেকে তারা স্বর্ণ অলঙ্কার, কীরিট খুলে নিতে লাগলো। পশু জাতি নিজেরাই সেই সকল অলঙ্কার ধারণ করে অতি আনন্দে লম্ফ ঝম্ফ করতে লাগলো। ত্রিজটা গিয়ে সংবাদ দিলো- “পুত্রী সীতা! তোমার কষ্টের জীবন সমাপন হয়েছে। তোমার স্বামী শ্রীরামে শরে রাবণ নিহত হয়েছে। এবার কেউ তোমাকে লঙ্কায় বন্দী করে রাখতে পারবে না। শীঘ্র তুমি স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পারবে।” শুনে সীতাদেবী অনেক খুশী হলেন। মাতা ত্রিজটাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলেন ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন