হৈ হৈ করে রাক্ষসেরা নানা অস্ত্রাদি বর্ষণ করতে করতে তেড়ে আসলো। অপরদিকে বানরেরা বৃহৎ শিলা ও বৃক্ষ নিক্ষেপ করতে লাগলো। উভয়ে উভয়ের নিক্ষেপিত অস্ত্রে হতাহত হতে লাগলো । রাবণের বাহিনী প্রচণ্ড বেগে আঘাত হানলো। রথ গুলি থেকে বাণ বর্ষণ করা হল। অপরদিকে মর্কটেরা বৃহৎ বৃক্ষ নিক্ষেপ করে রথ গুলিকে চূর্ণ চূর্ণ করলো। হস্তী গুলি যখন পদ পিষ্ট করে মর্কট দের বধ করছিলেন, তখন বানরেরা শিলা নিক্ষেপ করে হাতীগুলিকে ধরাশায়ী করলেন। বৃহৎ কালো মেঘের ন্যায় হস্তীগুলী ভয়ানক শব্দে গর্জন করে মেদিনী কাঁপিয়ে ভূমিতে পড়ে মরল। হস্তীর দেহের স্তূপ দেখে মনে হল, বিশাল এক পর্বত যুদ্ধক্ষেত্র মাঝে অবস্থান করছে । রাবন তখন ধনুকে শর যোজোনা করলেন। রাবণের শর থেকে লক্ষ লক্ষ শর উৎপন্ন হয়ে বানরদলে আছরে পড়লো । সকলে দেখলো বানর দের হস্ত পদ মুণ্ড বায়ু বেগে শরীর থেকে ছিন্নবিছিন্ন হয়ে উরে উরে ভূমিতে পড়ছে । রক্তনদীর ধারায় ভাসল মেদিনী। জাম্বুবান তার ভল্লুক বাহিনী নিয়ে রাবণের অঙ্গরক্ষক রাক্ষস দের সাথে যুদ্ধ আরম্ভ করলো। ভল্লুকেরা লম্ফ দিয়ে সেই বলশালী রাক্ষসদের ওপর পড়ে মুণ্ড ছিড়ে ফেলে দিলো। এই দেখে রাবণ নানান দিব্যাস্ত্র দিয়ে জাম্বুবানের ভল্লুক কটক নষ্ট করতে আরম্ভ করলেন। ভল্লুকেরা ছিন্নভিন্ন হল । এই সময় হনুমান এগিয়ে গেলো। গদা প্রহারে রাবণের সুরক্ষা বাহিনীকে ধ্বস্ত করে দিলো। তখন ভগবান রাম , মাতলিকে বললেন- “মাতলি! শীঘ্র আমাকে রাবণের পানে নিয়া চল।” মাতলি সেদিকেই রথ নিয়ে গেলো। রাবণ বলল- “ওরে ভিখারী বনবাসী রাম। যারা তোকে রথ দিয়ে সাহায্য করেছে, তারা সকলে আমার হস্তে পরাজিত হয়েছে। সুতরাং তাহাদিগের রথে অধিষ্ঠিত হলেও, তুই জয়ী হইবি না। প্রান বাঁচাতে চাইলে যুদ্ধ থামিয়ে পলায়ন কর।” ভগবান শ্রীরাম বললেন- “ওরে দুষ্ট দশানন। যেই প্রকার দেবজয়ী মেঘনাদ আর নেই, সেই প্রকার রাবণ নামক কোন দুষ্ট আগামীতে থাকবে না। তোর পক্ষে এটাই শুভ হবে যে সীতাকে ফিরিয়ে দে।”
এই বলে ভগবান শ্রীরাম রাবণকে লক্ষ করে সমানে বাণ বর্ষণ করলেন। সেই বাণের প্রভাবে রাবণের রথ, ধ্বজ খণ্ডখণ্ড হলে রাবণ ভূতলে গমন করলেন। পুনরায় আর একটি রথে উঠলেন । তখন শ্রীরামের পানে গদা, পরিঘ, চক্রবাণ, মুষল, শূল, পরশু, গিরিশৃঙ্গ , বৃক্ষ ও অনেক বাণ নিক্ষেপ করলেন। ভগবান শ্রীরাম কবচ বাণ নিক্ষেপ করলেন। ভগবান শ্রীরামের রথের চারপাশে এমন সুরক্ষা বলয় উৎপন্ন হল যে রাবণের কোন বাণ কাজ করলো না। শ্রীরামের ভ্রাতা লক্ষ্মণ অগ্নিবাণে রাক্ষসদের ভস্ম করে দিলেন। পর্বত বাণ নিক্ষেপ করলেন, বিশাল পর্বত রাক্ষস সেনাদলের মাঝে পতিত হয়ে তাদের পিষ্ট করলো । পবন বাণ নিক্ষেপ করলেন, রাক্ষসেরা উরে গিয়ে সমুদ্র গভীর জলে তলিয়ে গেলো, বজ্র বাণ নিক্ষেপ করা মাত্রই আকাশ থেকে কানে তালা লাগানোর মতো বাজ পড়ে রাক্ষসেরা ভস্ম হল। বানরেরা , লক্ষ্মণের নামে জয়ধ্বনি করলেন । অপরদিকে শ্রীরামের অস্ত্রে রাবণের আশেপাশে সকল রাক্ষসেরা ধূলিসাৎ হল। রাবণ দেখলো, চতুর্দিকে তার সেনারা মুখ থুবরে পড়ে হত হচ্ছে । রাবণ অনেক বাণ নিক্ষেপ করেও- শ্রীরামের বাণকে নিস্ফল করতে পারলেন না । এইভাবে সেদিনের যুদ্ধ সমাপ্ত হল। পরদিন প্রভাত হতেই শুক্লা অষ্টমী তিথিতেই রাবণ আবার দশ অক্ষৌহিণী সেনা নিয়ে যুদ্ধে আসলো। রাক্ষসেরা বানর দেখা মাত্রই নানা অস্ত্র উচিয়ে ধেয়ে গেলো। রাক্ষসদের অস্ত্র গুলি দর্পণের ন্যায় মনে হচ্ছিল্ল। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বানরেরা হত হতে থাকলে ভগবান শ্রীরাম খড়্গ বাণ নিক্ষেপ করলেন । খড়্গ বানের থেকে অসংখ্য খড়্গ উৎপন্ন হয়ে রাক্ষসদের দিকে ছুটে গেলো। খড়্গের আঘাতে রাক্ষসেরা দুটুকরো হয়ে গেলো। রাবণ আদেশ দিলো- “হে রাক্ষসেরা! তোমরা রামকে যুদ্ধে আটকে রাখো এখানে। আমি সেই সুযোগে সুগ্রীব ও অঙ্গদকে বধ করবো।” এই বলে রাবণ চার অক্ষৌহিণী সেনা নিয়ে বানর দলের ওপর আঘাত করলো। রাবণের নেতৃত্বে রাক্ষসেরা বানরদের কেটে কেটে সংখ্যা কমিয়ে দিতে লাগলো । বানরদের দেহ পিষ্ট করে তার ওপর দিয়ে রাক্ষসেরা রথ, হস্তী নিয়ে গেলো । রাবণ তখন সুগ্রীব আর অঙ্গদের দিকে চোখের পলকে শত শত শর নিক্ষেপ আরম্ভ করলেন । সুগ্রীব ও অঙ্গদ আহত হল । বিভীষণ তখন গদা হাতে ছুটে এলো। বলল- “অগ্রজ! তোমার পাপের ঘরা পূর্ণ হয়েছে। তাই অধিক উপদ্রব করছ। প্রদীপ নির্বাপণের আগে তা শেষবারের মতো অতি আলো উৎপন্ন করে নেয়- তোমার সেই দশা হয়েছে।”
বিভীষণকে দেখে রাবণ বলল- “কুলঘাতী! আজ তোকে সামনে পেয়েছি। দেখি তোকে কে রক্ষা করে!” এই বলে রাবণ গদা নিয়ে বিভীষণের সাথে যুদ্ধ করতে লাগলো । কিন্তু বিভীষণ বেশী ক্ষণ যুদ্ধ করতে পারলো না। ক্লান্ত হয়ে গেলো। রাবণ এই সুযোগে বিভীষণের মস্তক চূর্ণ করতে গদা প্রহার করতে গেলে হনুমান এসে রাবণকে আঘাত হানলো । হনুমানের বুকে , রাবণ এত জোরে মুষ্টাঘাত করলেন যে হনুমান রক্ত বমি করতে করতে ভূমিতে পতিত হল । তারপর হনুমান প্রবল ক্রোধে উঠে দাঁড়ালো। মুখ দিয়ে গর্জন করে হনুমান বলল- “ওরে দুষ্ট ! তুই নিজেও জানিস না তুই কার ওপর আঘাত করেছিস। চেয়ে দেখ আমি কে?” রাবণ যেনো এক মুহূর্তের মতো দেখলেন হনুমানের মুখের আদলে দেবাদিদেব, হস্তে ত্রিশূল। হনুমানকে দেখলেন পঞ্চমুখে শিবের ন্যায় পঞ্চানন হয়েছেন । পাঁচমুখ হল- মর্কট, হয়গ্রীব অর্থাৎ অশ্ব, নৃসিংহ , গরুর এবং বরাহ । হনুমান একবার সেই রূপ দেখিয়ে সেই রূপ গুটিয়ে নিলেন । তারপর হনুমান আকাশে লম্ফ দিয়ে উঠলে রাবণ তার লেজ ধরে টেনে নামালেন । হনুমানের সাথে রাবণের সেই যুদ্ধ আরম্ভ হল । দুজনের গদার আঘাতে ধরিত্রী কেঁপে উঠলো । উভয়ে উভয়কে গদাঘাত করলো ।
সম্ভারি শ্রীরঘুবীর ধীর পচারি
কপি রাবনু হন্যো ।
মহি পরত পুনি উঠি লরত দেবনহ
জুগল কহুঁ জয় জয় ভন্যো ।।
হনুমন্ত সংকট দেখি মর্কট
ভালু ক্রোধাতুর চলে ।
রন মত্ত রাবন সকল সুভট
প্রচণ্ড ভুজ বল দলমলে ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
অর্থাৎ- শ্রী রঘুবীরকে স্মরণ করে বীর শ্রী হনুমান গর্জন করে রাবণকে আঘাত হানলেন । তারা উভয়েই ভূমিতে পড়ে গিয়ে আবার যুদ্ধে প্রবৃত্ত হচ্ছিল্লেন ; দেবতাগণ তখন জয়ধ্বনি দিলেন । শ্রী হনুমানের ওপর সঙ্কটের ছায়া দেখে ঋক্ষ মর্কট গণ সক্রোধে ছুটে গেলেন । কিন্তু রণে মত্ত রাবণ তার বাহুবলে সেই যোদ্ধাদের বধ করলেন ।
এই বলে ভগবান শ্রীরাম রাবণকে লক্ষ করে সমানে বাণ বর্ষণ করলেন। সেই বাণের প্রভাবে রাবণের রথ, ধ্বজ খণ্ডখণ্ড হলে রাবণ ভূতলে গমন করলেন। পুনরায় আর একটি রথে উঠলেন । তখন শ্রীরামের পানে গদা, পরিঘ, চক্রবাণ, মুষল, শূল, পরশু, গিরিশৃঙ্গ , বৃক্ষ ও অনেক বাণ নিক্ষেপ করলেন। ভগবান শ্রীরাম কবচ বাণ নিক্ষেপ করলেন। ভগবান শ্রীরামের রথের চারপাশে এমন সুরক্ষা বলয় উৎপন্ন হল যে রাবণের কোন বাণ কাজ করলো না। শ্রীরামের ভ্রাতা লক্ষ্মণ অগ্নিবাণে রাক্ষসদের ভস্ম করে দিলেন। পর্বত বাণ নিক্ষেপ করলেন, বিশাল পর্বত রাক্ষস সেনাদলের মাঝে পতিত হয়ে তাদের পিষ্ট করলো । পবন বাণ নিক্ষেপ করলেন, রাক্ষসেরা উরে গিয়ে সমুদ্র গভীর জলে তলিয়ে গেলো, বজ্র বাণ নিক্ষেপ করা মাত্রই আকাশ থেকে কানে তালা লাগানোর মতো বাজ পড়ে রাক্ষসেরা ভস্ম হল। বানরেরা , লক্ষ্মণের নামে জয়ধ্বনি করলেন । অপরদিকে শ্রীরামের অস্ত্রে রাবণের আশেপাশে সকল রাক্ষসেরা ধূলিসাৎ হল। রাবণ দেখলো, চতুর্দিকে তার সেনারা মুখ থুবরে পড়ে হত হচ্ছে । রাবণ অনেক বাণ নিক্ষেপ করেও- শ্রীরামের বাণকে নিস্ফল করতে পারলেন না । এইভাবে সেদিনের যুদ্ধ সমাপ্ত হল। পরদিন প্রভাত হতেই শুক্লা অষ্টমী তিথিতেই রাবণ আবার দশ অক্ষৌহিণী সেনা নিয়ে যুদ্ধে আসলো। রাক্ষসেরা বানর দেখা মাত্রই নানা অস্ত্র উচিয়ে ধেয়ে গেলো। রাক্ষসদের অস্ত্র গুলি দর্পণের ন্যায় মনে হচ্ছিল্ল। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বানরেরা হত হতে থাকলে ভগবান শ্রীরাম খড়্গ বাণ নিক্ষেপ করলেন । খড়্গ বানের থেকে অসংখ্য খড়্গ উৎপন্ন হয়ে রাক্ষসদের দিকে ছুটে গেলো। খড়্গের আঘাতে রাক্ষসেরা দুটুকরো হয়ে গেলো। রাবণ আদেশ দিলো- “হে রাক্ষসেরা! তোমরা রামকে যুদ্ধে আটকে রাখো এখানে। আমি সেই সুযোগে সুগ্রীব ও অঙ্গদকে বধ করবো।” এই বলে রাবণ চার অক্ষৌহিণী সেনা নিয়ে বানর দলের ওপর আঘাত করলো। রাবণের নেতৃত্বে রাক্ষসেরা বানরদের কেটে কেটে সংখ্যা কমিয়ে দিতে লাগলো । বানরদের দেহ পিষ্ট করে তার ওপর দিয়ে রাক্ষসেরা রথ, হস্তী নিয়ে গেলো । রাবণ তখন সুগ্রীব আর অঙ্গদের দিকে চোখের পলকে শত শত শর নিক্ষেপ আরম্ভ করলেন । সুগ্রীব ও অঙ্গদ আহত হল । বিভীষণ তখন গদা হাতে ছুটে এলো। বলল- “অগ্রজ! তোমার পাপের ঘরা পূর্ণ হয়েছে। তাই অধিক উপদ্রব করছ। প্রদীপ নির্বাপণের আগে তা শেষবারের মতো অতি আলো উৎপন্ন করে নেয়- তোমার সেই দশা হয়েছে।”
বিভীষণকে দেখে রাবণ বলল- “কুলঘাতী! আজ তোকে সামনে পেয়েছি। দেখি তোকে কে রক্ষা করে!” এই বলে রাবণ গদা নিয়ে বিভীষণের সাথে যুদ্ধ করতে লাগলো । কিন্তু বিভীষণ বেশী ক্ষণ যুদ্ধ করতে পারলো না। ক্লান্ত হয়ে গেলো। রাবণ এই সুযোগে বিভীষণের মস্তক চূর্ণ করতে গদা প্রহার করতে গেলে হনুমান এসে রাবণকে আঘাত হানলো । হনুমানের বুকে , রাবণ এত জোরে মুষ্টাঘাত করলেন যে হনুমান রক্ত বমি করতে করতে ভূমিতে পতিত হল । তারপর হনুমান প্রবল ক্রোধে উঠে দাঁড়ালো। মুখ দিয়ে গর্জন করে হনুমান বলল- “ওরে দুষ্ট ! তুই নিজেও জানিস না তুই কার ওপর আঘাত করেছিস। চেয়ে দেখ আমি কে?” রাবণ যেনো এক মুহূর্তের মতো দেখলেন হনুমানের মুখের আদলে দেবাদিদেব, হস্তে ত্রিশূল। হনুমানকে দেখলেন পঞ্চমুখে শিবের ন্যায় পঞ্চানন হয়েছেন । পাঁচমুখ হল- মর্কট, হয়গ্রীব অর্থাৎ অশ্ব, নৃসিংহ , গরুর এবং বরাহ । হনুমান একবার সেই রূপ দেখিয়ে সেই রূপ গুটিয়ে নিলেন । তারপর হনুমান আকাশে লম্ফ দিয়ে উঠলে রাবণ তার লেজ ধরে টেনে নামালেন । হনুমানের সাথে রাবণের সেই যুদ্ধ আরম্ভ হল । দুজনের গদার আঘাতে ধরিত্রী কেঁপে উঠলো । উভয়ে উভয়কে গদাঘাত করলো ।
সম্ভারি শ্রীরঘুবীর ধীর পচারি
কপি রাবনু হন্যো ।
মহি পরত পুনি উঠি লরত দেবনহ
জুগল কহুঁ জয় জয় ভন্যো ।।
হনুমন্ত সংকট দেখি মর্কট
ভালু ক্রোধাতুর চলে ।
রন মত্ত রাবন সকল সুভট
প্রচণ্ড ভুজ বল দলমলে ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
অর্থাৎ- শ্রী রঘুবীরকে স্মরণ করে বীর শ্রী হনুমান গর্জন করে রাবণকে আঘাত হানলেন । তারা উভয়েই ভূমিতে পড়ে গিয়ে আবার যুদ্ধে প্রবৃত্ত হচ্ছিল্লেন ; দেবতাগণ তখন জয়ধ্বনি দিলেন । শ্রী হনুমানের ওপর সঙ্কটের ছায়া দেখে ঋক্ষ মর্কট গণ সক্রোধে ছুটে গেলেন । কিন্তু রণে মত্ত রাবণ তার বাহুবলে সেই যোদ্ধাদের বধ করলেন ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন