রাবণের অন্ত হতেই বানরেরা সব ছুটে এলো । রাবণের রথের টুকরো হনুমান এক স্থানে জমা করলো। অঙ্গদ , রাবণের গদা এনে রাখলো। নীল কর্ণের কুণ্ডল কুড়িয়ে রাখলো। হাতের বলয় নল এনে রাখলো । এভাবে অনান্য বানরেরা নানা আভূষণ কুড়িয়ে এনে রাখলো। রাবণ দেখতে হুড়োহুড়ি পড়লো বানরের । রুধিরে লিপ্ত রাবণের সমস্ত দেহ । বিশাল চেহারা। যেন শত সূর্য দেব একত্র হয়ে রাবণের সৃষ্টি হয়েছে । ব্রাহ্মণ রাবণের উপবীত থেকে দিব্য জ্যোতি নির্গত হচ্ছিল্ল । নিথর রাবণের লোমকূপ থেকে জ্যোতি নির্গত হচ্ছিল্ল। ব্রহ্মার তেজ যেন সমাহিত ছিলো। বিভীষণ রোদন করতে লাগলো। বিলাপ করে বলতে লাগলো- “ভ্রাতা! এ আপনার কি হল। কত বার নিষেধ করেছিলাম সীতা দেবীকে হরণ করে আনবেন না। কতবার বুঝিয়েছি সীতাদেবীকে ফিরিয়ে দিন। কতবার বুঝিয়েছি এই যুদ্ধে আপনি জয়ী হতে পারবেন না। আপনি কোন পরামর্শই শোনেন নি । আপনার প্রবল জেদের কারণে অগ্রজ কুম্ভকর্ণ নিহত হয়েছেন, আপনিও আজ নিহত হলেন । কেন আপনি এমন অধর্ম করলেন? আমি অনাথ হয়ে গেলাম ভ্রাতা।” বিভীষণ এভাবে রোদন করতে থাকলে ভগবান শ্রীরাম বললেন- “মিত্র বিভীষণ! রাবণ বীর যোদ্ধা ছিলেন । বীরের মৃত্যু হয় না। এই লঙ্কার সাথে তাঁর নাম চির অমর হয়ে থাকবে। তুমি তোমার ভ্রাতার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করে শ্রাদ্ধশান্তি করো। মৃত্যুর পর আর শত্রুতা থাকে না। সেইজন্য এই রাবণ তোমার ন্যায় আমার কাছে প্রিয় হল। আমরা সকলে এই বীরকে শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করবো।” তখন দেখা গেলো মন্দোদরী সহ রাবণের কামিনী গণ যুদ্ধভূমিতে রোদন করতে করতে ছুটে আসছেন উন্মত্ত পাগলিনীর ন্যায় । মন্দোদরী এসে স্বামীর চরণ স্বীয় ক্রোড়ে রেখে ক্রন্দন করে বলতে লাগলেন –
একবার বদন তুলে ফিরে চাও হে,
উঠ উঠ লঙ্কা অধিকারী ।
আমার শূন্য হ’লো লঙ্কাপুরী ।।
ওহে ত্যজে শয্যা মনোহর ।
কেন ধূলায় ধুসর কলেবর ।।
রাবণে বেড়িয়া কান্দে চৌদ্দ হাজার নারী ।
শশধরে যেন তারাগণ আছে ঘেরি ।।
সোণার কোমল অঙ্গ ধূলাতে মগন ।
মন্দোদরী কান্দে ধরি স্বামীর চরণ ।।
আমারে ছাড়িয়া প্রভু যাহ কোন স্থানে ।
কেমনে ধরিব প্রাণ তোমার মরণে ।।
কেন বা আনিলে সীতা এ কালসাপিনী ।
স্বর্ণ- লঙ্কাপুরে না রহিল এক প্রানী ।।
কি কাজ করিল তব শঙ্কর শঙ্করী ।
রাম লক্ষ্মণ সংহারিল স্বর্ণ – লঙ্কাপুরী ।।
আপদ পড়িলে দেখ কেহ কারো নয় ।
সীতার কারণে হ’লো এতেক প্রলয় ।।
শমন হইল তব শূর্পনাখা ভগ্নী ।
তার বাক্যে আনি সীতা হারালে পরাণী ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এই বলে মন্দোদরী সহ রাবণের রানীরা ক্রন্দন করতে বলতে লাগলো- “হে স্বামী! আপনাকে বারণ করেছিলাম এই যুদ্ধ না করতে । এখন আমাদের কি গতি হবে ? কার কাছে থাকবো ? কার নামে আর শাঁখা সিঁদূর ধারণ করবো। আপনি যদি আপনার ভ্রাতার কথা মানতেন তবে এখন সুখে লঙ্কায় রাজত্ব করতেন । দেখুন সীতা হরণ করে আপনি আপনার নিজের কূলের নাশ ঘটালেন। নিজেও নাশ হলেন। হায় ! যদি আপনি সুবুদ্ধিদাতাদের কথা শুনতেন তবে আমাদের এই বৈধব্য দশা হত না । সীতাতে মজে আপনি সেই সর্বনাশ ঘটালেন যার আশাঙ্কাতে বুক কাঁপত । যেই রঘুনাথের হস্তে অতীব শক্তিশালী রাক্ষসেরা নিহত হয়েছে- তাঁহার সহিত কেন শত্রুতা স্থাপন করলেন ? আমরা জানতাম এই যুদ্ধে লঙ্কার জয় হতোই না। কতবার বুঝিয়েছি- প্রতিবার আপনি কেবল গর্জন করে গেছেন । আজ আপনার এই দশা হয়েছে। আমরা কি নিয়ে বাঁচবো ? কে এই বিধবাদের রক্ষা করবে ? স্বামীই স্ত্রীর রক্ষক- স্বামী হীন পত্নী সমাজের চিন্তার কারণ। হে নাথ! কেন আপনি এই সকল চিন্তা করে যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হলেন না ।” মন্দোদরীর বুক চোখের জলে ভাসল। তারপর মন্দোদরী ভগবান শ্রীরামকে প্রণাম করে বললেন- “হে রঘুবীর! আপনার প্রতি আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আপনি যথার্থ স্বামীর কর্তব্যই করেছেন । দেবী সীতাকে উদ্ধার করতে যুদ্ধে নেমে বধ করেছেন । স্ত্রীকে রক্ষা করাই স্বামীর প্রধান কর্তব্য। হায়! যদি আমার স্বামী এই কথা বুঝে যুদ্ধে না গমন করতেন! যদি সীতাকে ফিরিয়ে দিতেন! হে শ্রীরাম! আপনি এখন লঙ্কাকে জয়ী করেছেন । লঙ্কার যাবতীয় ঐশ্বর্য এখন আপনার চরণে। কৃপা করে আমাদের এখন স্বামীর চরণে বসে সতী হতে আদেশ করুন।” শ্রীরাম বললেন- “হে দেবী মন্দোদরী! আপনি মহা সতী! সতী শিরোমণি । কৃপা পূর্বক আমাদের যে অভিশাপ প্রদান করেন নি- এতেই আপনার মহান ভাব মূর্তি প্রস্ফুটিত হয়েছে । আমি পর রাজ্য আক্রমণ করে দখল করার নীতিতে বিশ্বাসী নই । লঙ্কার ঐশ্বর্য প্রাপ্তি আমার লক্ষ্য ছিলো না। লঙ্কা আপনাদের ছিলো- আপনাদেরই থাকবে। কেউ দখল করবে না। আপনার স্বামীর ভ্রাতাই এই লঙ্কার রাজা হয়ে লঙ্কার সেবা করবে। সীতাকে ফিরে পেতেই আমি এই যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। আমি বহুবার সীতাকে ফিরিয়ে দিতে দশাননকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু বার বার সে সেই শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে। আমি বাধ্য হয়েছি।”
তখন ভগবান শ্রীরাম আরোও বললেন- “ আমি সতী হতে আদেশ কদাপি দিতে পারি না। তোমার পুত্র বধূ সতী হয়েছেন – এই ভার এখনও আমাকে গ্রাস করে আছে। বারবার আমি সতী প্রথার অনুমতি দিলে এর ফলে ঘৃন্য সতী প্রথার উদ্ভব ঘটবে। সতী প্রথাকে আমি আত্মহত্যার তুল্য মনে করি। আত্মহত্যা করা- আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়া উভয়ই ঘৃন্য জঘন্য অপরাধ। আপনারা স্বর্গীয় রাবণের স্ত্রী রূপে লঙ্কায় যথাযোগ্য সম্মান নিয়ে বাস করবেন। আমার মিত্র বিভীষণ ধর্মাত্মা। তাঁর রাজ্যে কোন প্রকার নারী নির্যাতন হবে না।” এরপর ভগবান শ্রীরাম বললেন- “মিত্র বিভীষণ! তুমি যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে তোমার নিহত ভ্রাতার পত্নীদের লঙ্কায় রাখবে। দেখো এনাদের যেন কোন অমর্যাদা না হয় । এবার তুমি তোমার ভ্রাতার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সুসম্পন্ন করো।” এই বলে ভগবান শ্রীরাম, লক্ষ্মণ সহ সকলে রাবণকে পুস্প দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করলেন । বিভীষণের উদ্যোগে রাবণের দেহে ক্ষৌম বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে স্বর্ণ শকটে রাখলেন। বহু পুস্প ও পতাকা, সুগন্ধি দেওয়া হল। ব্রাহ্মণেরা নানা স্তুতি পাঠ করলেন। রাক্ষসেরা চন্দন কাঠ নিয়ে যেতে লাগলো শ্মশানে। চোখের জলে মাতা কেকসী , মুনি বিশ্বশ্রবা পুত্রকে বিদায় দিলেন । রাবণের স্ত্রীরা সিঁদুর মুছে রাবণকে বিদায় জানালেন । শ্মশানে অগ্নিকোণে চন্দন , পদ্মক, উদশীর দ্বারা চিতা নির্মাণ হল । তাঁহার স্কন্ধে দধি , উরুতে উদূখল, অরণি, উত্তরারণি ও দারুপাত্র দেওয়া হল। শাস্ত্রজ্ঞ মহর্ষি দের বিধানে মেধ্য পশু হনন করে তাহাদের চর্ম দিয়ে রাক্ষস রাজের মুখ আচ্ছাদিত করলেন । গন্ধ, মাল্য, বিবিধ বস্ত্রাদি ও অলঙ্কারে সুসজ্জিত করে সকলে অন্তিম বার শ্রদ্ধাঞ্জলি দিলেন । পরে বিভীষণ যথাবিহিত নিয়মে চিতায় অগ্নি দিলেন । ঘৃত, সুগন্ধি তৈলে মিশ্রিত চিতা লেলিহান আগুনের শিখা গ্রাস করলো। ধূম আকাশ স্পর্শ করলো। রাবণের দেহ পঞ্চভূত নিয়ে নিলো । দেখতে দেখতে চিতার আগুনে রাবণের দেহ ভস্ম হল। সমুদ্রের বারি দ্বারা চিতা ধৌত করে রাবণের অস্থি সমুদ্রে বিসর্জন করা হল। সমুদ্রে স্নান করে বিভীষণ সহ রাক্ষসেরা রাজ্যে ফিরে গেলো ।
( ক্রমশঃ )
একবার বদন তুলে ফিরে চাও হে,
উঠ উঠ লঙ্কা অধিকারী ।
আমার শূন্য হ’লো লঙ্কাপুরী ।।
ওহে ত্যজে শয্যা মনোহর ।
কেন ধূলায় ধুসর কলেবর ।।
রাবণে বেড়িয়া কান্দে চৌদ্দ হাজার নারী ।
শশধরে যেন তারাগণ আছে ঘেরি ।।
সোণার কোমল অঙ্গ ধূলাতে মগন ।
মন্দোদরী কান্দে ধরি স্বামীর চরণ ।।
আমারে ছাড়িয়া প্রভু যাহ কোন স্থানে ।
কেমনে ধরিব প্রাণ তোমার মরণে ।।
কেন বা আনিলে সীতা এ কালসাপিনী ।
স্বর্ণ- লঙ্কাপুরে না রহিল এক প্রানী ।।
কি কাজ করিল তব শঙ্কর শঙ্করী ।
রাম লক্ষ্মণ সংহারিল স্বর্ণ – লঙ্কাপুরী ।।
আপদ পড়িলে দেখ কেহ কারো নয় ।
সীতার কারণে হ’লো এতেক প্রলয় ।।
শমন হইল তব শূর্পনাখা ভগ্নী ।
তার বাক্যে আনি সীতা হারালে পরাণী ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
এই বলে মন্দোদরী সহ রাবণের রানীরা ক্রন্দন করতে বলতে লাগলো- “হে স্বামী! আপনাকে বারণ করেছিলাম এই যুদ্ধ না করতে । এখন আমাদের কি গতি হবে ? কার কাছে থাকবো ? কার নামে আর শাঁখা সিঁদূর ধারণ করবো। আপনি যদি আপনার ভ্রাতার কথা মানতেন তবে এখন সুখে লঙ্কায় রাজত্ব করতেন । দেখুন সীতা হরণ করে আপনি আপনার নিজের কূলের নাশ ঘটালেন। নিজেও নাশ হলেন। হায় ! যদি আপনি সুবুদ্ধিদাতাদের কথা শুনতেন তবে আমাদের এই বৈধব্য দশা হত না । সীতাতে মজে আপনি সেই সর্বনাশ ঘটালেন যার আশাঙ্কাতে বুক কাঁপত । যেই রঘুনাথের হস্তে অতীব শক্তিশালী রাক্ষসেরা নিহত হয়েছে- তাঁহার সহিত কেন শত্রুতা স্থাপন করলেন ? আমরা জানতাম এই যুদ্ধে লঙ্কার জয় হতোই না। কতবার বুঝিয়েছি- প্রতিবার আপনি কেবল গর্জন করে গেছেন । আজ আপনার এই দশা হয়েছে। আমরা কি নিয়ে বাঁচবো ? কে এই বিধবাদের রক্ষা করবে ? স্বামীই স্ত্রীর রক্ষক- স্বামী হীন পত্নী সমাজের চিন্তার কারণ। হে নাথ! কেন আপনি এই সকল চিন্তা করে যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হলেন না ।” মন্দোদরীর বুক চোখের জলে ভাসল। তারপর মন্দোদরী ভগবান শ্রীরামকে প্রণাম করে বললেন- “হে রঘুবীর! আপনার প্রতি আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আপনি যথার্থ স্বামীর কর্তব্যই করেছেন । দেবী সীতাকে উদ্ধার করতে যুদ্ধে নেমে বধ করেছেন । স্ত্রীকে রক্ষা করাই স্বামীর প্রধান কর্তব্য। হায়! যদি আমার স্বামী এই কথা বুঝে যুদ্ধে না গমন করতেন! যদি সীতাকে ফিরিয়ে দিতেন! হে শ্রীরাম! আপনি এখন লঙ্কাকে জয়ী করেছেন । লঙ্কার যাবতীয় ঐশ্বর্য এখন আপনার চরণে। কৃপা করে আমাদের এখন স্বামীর চরণে বসে সতী হতে আদেশ করুন।” শ্রীরাম বললেন- “হে দেবী মন্দোদরী! আপনি মহা সতী! সতী শিরোমণি । কৃপা পূর্বক আমাদের যে অভিশাপ প্রদান করেন নি- এতেই আপনার মহান ভাব মূর্তি প্রস্ফুটিত হয়েছে । আমি পর রাজ্য আক্রমণ করে দখল করার নীতিতে বিশ্বাসী নই । লঙ্কার ঐশ্বর্য প্রাপ্তি আমার লক্ষ্য ছিলো না। লঙ্কা আপনাদের ছিলো- আপনাদেরই থাকবে। কেউ দখল করবে না। আপনার স্বামীর ভ্রাতাই এই লঙ্কার রাজা হয়ে লঙ্কার সেবা করবে। সীতাকে ফিরে পেতেই আমি এই যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। আমি বহুবার সীতাকে ফিরিয়ে দিতে দশাননকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু বার বার সে সেই শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে। আমি বাধ্য হয়েছি।”
তখন ভগবান শ্রীরাম আরোও বললেন- “ আমি সতী হতে আদেশ কদাপি দিতে পারি না। তোমার পুত্র বধূ সতী হয়েছেন – এই ভার এখনও আমাকে গ্রাস করে আছে। বারবার আমি সতী প্রথার অনুমতি দিলে এর ফলে ঘৃন্য সতী প্রথার উদ্ভব ঘটবে। সতী প্রথাকে আমি আত্মহত্যার তুল্য মনে করি। আত্মহত্যা করা- আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেওয়া উভয়ই ঘৃন্য জঘন্য অপরাধ। আপনারা স্বর্গীয় রাবণের স্ত্রী রূপে লঙ্কায় যথাযোগ্য সম্মান নিয়ে বাস করবেন। আমার মিত্র বিভীষণ ধর্মাত্মা। তাঁর রাজ্যে কোন প্রকার নারী নির্যাতন হবে না।” এরপর ভগবান শ্রীরাম বললেন- “মিত্র বিভীষণ! তুমি যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে তোমার নিহত ভ্রাতার পত্নীদের লঙ্কায় রাখবে। দেখো এনাদের যেন কোন অমর্যাদা না হয় । এবার তুমি তোমার ভ্রাতার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সুসম্পন্ন করো।” এই বলে ভগবান শ্রীরাম, লক্ষ্মণ সহ সকলে রাবণকে পুস্প দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করলেন । বিভীষণের উদ্যোগে রাবণের দেহে ক্ষৌম বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে স্বর্ণ শকটে রাখলেন। বহু পুস্প ও পতাকা, সুগন্ধি দেওয়া হল। ব্রাহ্মণেরা নানা স্তুতি পাঠ করলেন। রাক্ষসেরা চন্দন কাঠ নিয়ে যেতে লাগলো শ্মশানে। চোখের জলে মাতা কেকসী , মুনি বিশ্বশ্রবা পুত্রকে বিদায় দিলেন । রাবণের স্ত্রীরা সিঁদুর মুছে রাবণকে বিদায় জানালেন । শ্মশানে অগ্নিকোণে চন্দন , পদ্মক, উদশীর দ্বারা চিতা নির্মাণ হল । তাঁহার স্কন্ধে দধি , উরুতে উদূখল, অরণি, উত্তরারণি ও দারুপাত্র দেওয়া হল। শাস্ত্রজ্ঞ মহর্ষি দের বিধানে মেধ্য পশু হনন করে তাহাদের চর্ম দিয়ে রাক্ষস রাজের মুখ আচ্ছাদিত করলেন । গন্ধ, মাল্য, বিবিধ বস্ত্রাদি ও অলঙ্কারে সুসজ্জিত করে সকলে অন্তিম বার শ্রদ্ধাঞ্জলি দিলেন । পরে বিভীষণ যথাবিহিত নিয়মে চিতায় অগ্নি দিলেন । ঘৃত, সুগন্ধি তৈলে মিশ্রিত চিতা লেলিহান আগুনের শিখা গ্রাস করলো। ধূম আকাশ স্পর্শ করলো। রাবণের দেহ পঞ্চভূত নিয়ে নিলো । দেখতে দেখতে চিতার আগুনে রাবণের দেহ ভস্ম হল। সমুদ্রের বারি দ্বারা চিতা ধৌত করে রাবণের অস্থি সমুদ্রে বিসর্জন করা হল। সমুদ্রে স্নান করে বিভীষণ সহ রাক্ষসেরা রাজ্যে ফিরে গেলো ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন