
গন্ধর্বেরা খবর পেলো। গন্ধর্ব দেবতাদের অনুগত এক ধরনের জীব। যেমন- যক্ষ, রক্ষ, কিন্নর, বেতাল, কুস্মাণ্ড ইত্যাদি। গন্ধর্বেরা দেবতাদের খুব মান্য করেন। স্বর্গে সোমরস জোগান এরাই। আবার স্বর্গের নৃত্যে বিবিধ বাজনা বাজিয়ে তাল প্রদান করেন । গন্ধর্বেরা মায়াবী। বিভিন্ন ধরনের মায়া জানে তাহারা। এরা কিছু বদ হয় আবার কিছু উত্তম । এদের শরীর থেকে দিব্য সুগন্ধ বিচ্ছুরিত হয় । ভরতের সেনার পেছন পেছন রক্ত মাংসের আশায় ব্যাঘ্র, সিংহ, শৃগাল ও বিভিন্ন মাংসভোজী পক্ষী কুল চলছিলো। গৃধের দল আকাশে বিচরণ করতে করতে এই সেনা দলের পেছনে চলছিলো। শুধু কি তাই ! রক্তমাংস প্রিয় বেতাল, পিশাচেরা এই সেনা দলের পেছন পেছন চলছিলো। অবশেষে ভরত সেনা নিয়ে গন্ধর্ব প্রদেশে আবির্ভূত হল । সেই সিন্ধু নদের পাশে মনোরম পরিবেশ। সেই মনোরম পরিবেশ অতীব সুন্দর। সিন্ধ নদে বয়ে চলা জলের ধারার শব্দ শোনা যায়। মিষ্টি শীতল জল প্রবাহিত। দুপাশে অপূর্ব সুন্দর বন। বিভিন্ন গাছে বিভিন্ন সুগন্ধি পুস্প ভরে আছে। যাহার সুবাস বাতাস বহুদূর অবধি বহন করে নিয়ে যায়। আর মিষ্ট কতশত ফলে বৃক্ষ গুলি সজ্জিত হয়ে আছে। এই সুন্দর কানন প্রহরা দেয় তিন কোটি অত্যাচারী গন্ধর্ব। গন্ধর্বেরা খবর পেলো। শোনা মাত্রই হৈহৈ করে ছুটে এলো । এত সংখ্যক অয্যোধ্যার সেনাকে দেখে হাস্য করতে লাগলো। কারণ সংখ্যায় অল্প হলেও গন্ধর্বেরা ভাবল মায়াবিদ্যার সহায়তায় অল্প সময়ে এই সমস্ত কিছু নাশ করে দেবে । ভরতের নির্দেশ পেতেই সেনারা যুদ্ধে এগিয়ে গেলো। বর্শা, শর ইত্যাদি গন্ধর্ব দের দিগকে ছুড়তে লাগলো। গন্ধর্বেরা মায়া বিদ্যার সহায়তায় সেই সকল অস্ত্র চূর্ণ করতে আরম্ভ করলো। গন্ধর্বেরা খড়্গ, দিব্যদণ্ড, তরবারি নিয়ে যুদ্ধে অগ্রসর হল। যুদ্ধের সময় তারা বিভিন্ন মায়ার আশ্রয় নিতে লাগলো। অদৃশ্য হয়ে অয্যোধ্যার সেনাদের ওপর আঘাত হানতে লাগলো। মায়া দ্বারা বৃহৎ প্রস্তর রূপ ধারণ করে অয্যোধ্যার সেনাদের ওপর পড়তে লাগলো।
মায়া আক্রমণে অয্যোধ্যার সেনারা কোণঠাসা হচ্ছিল্ল। রক্তনদীর ধারা গিয়ে সিন্ধু নদে মিশল। চারিদিকে কেবল অসংখ্য মৃত শব দেখা গেলো। কিছু গন্ধর্ব আবার মায়া দ্বারা নানা অস্ত্র ভরতের দিকে নিক্ষেপ করতে লাগলো। তক্ষ ও পুষ্কর তখন বিবিধ দিব্যাস্ত্রের সন্ধান করে গন্ধর্ব দের অস্ত্র গুলি চূর্ণ করতে লাগলো। দুই বালকের বীক্রম দেখে গর্বে ভরতের বুক ফুলে উঠলো। এই ত হলেন বীর সূর্যবংশী। লবকুশের ভ্রাতা এমনই শক্তিমান হওয়ার প্রয়োজন । চোখের পলকে নানা অস্ত্র নিক্ষেপ করে গন্ধর্ব দের অস্ত্র নষ্ট করতে লাগলো। ভরত নিজেও যুদ্ধে অগ্রসর করলেন। কিন্তু নানা দিব্যাস্ত্রে গন্ধর্বেরা ধ্বংস হল না। উলটে নানা মায়া বিদ্যা প্রয়োগ করে ভরতকে অতীষ্ঠ করে তুলল। তখন ভরত ধনুকে সেই গন্ধর্বনাশক ‘সংবর্ত’ অস্ত্রের আহ্বান করলেন। প্রবল বিক্রমশালী সংবর্ত অস্ত্র ভরতের ধনুকে আপন মহিমায় আবির্ভূত হলেন । ভরত মন্ত্র পড়ে সেই বাণ ছুঁড়লেন। অতি উজ্জ্বল আলো উৎপন্ন হয়ে সেই অস্ত্র গন্ধর্ব দের দিকে ধেয়ে গেলো। সেই দেখে গন্ধর্বদের ভয়ে যেনো মুখ- হাত- পা শুকিয়ে গেলো। অনেক মায়াবিদ্যা, অনেক অস্ত্র ছুড়লেও ভরতের নিক্ষেপিত অস্ত্র বিফল হল না । নিমিষে সেই অস্ত্র তিন কোটি শক্তিশালী গন্ধর্বকে ছিন্নবিছিন্ন করে দিলো। গন্ধর্বদের রক্ত মাংসে মেদিনী ঢাকা পড়লো। মাংসাশী প্রানীরা তাহা ভক্ষণ করতে লাগলো। যুদ্ধে ভরত জয়লাভ করলেন । এরপর মহারাজ শ্রীরামের আদেশে সেই বিজিত রাজ্য দুভাগ করে দুই পুত্রকে দিলেন । ‘তক্ষশীলা’ নামক রাজ্যের রাজা হলেন ভরতের এক পুত্র তক্ষ। অপর পুত্র পুষ্কর ‘পুষ্করাবতী’ রাজ্যের রাজা হলেন । ভরত সেই বিজিত রাজ্য ‘তক্ষশীলা’ , ‘পুষ্করাবতী’ নামক রাজ্যে ভাগ করেছিলেন । শ্রীরামচন্দ্র ইহা শুনে অতীব প্রসন্ন হলেন। এইভাবে মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র এগাড়ো হাজার বর্ষ রাজত্ব করেছিলেন।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন