মা কালী সম্বন্ধে কিছু বলা প্রয়োজন। আদ্যাশক্তির সম্পূর্ণ পরিচয় আমি কেন মুনি ঋষি, দেবতা, ত্রিদেবও জানেন না। যেইটুকু প্রকাশিত সেইটুকুই বলি-
যে কাল সর্ব জীবের গ্রাসকারী , সেই কালেরও যিনি গ্রাসকারীনি , মহানির্বাণ তন্ত্র বলেন তিনিই কালী – আদ্যাশক্তি ।
কলনাৎ সর্বভূতানাং মহাকালঃ প্রকীত্তিরত ।
মহাকালস্য কলনাৎ ত্বমাদ্যা কালিকা পরা ।
দেবীভাগবতপুরাণে বলে-
সদৈকত্বং ব ভেদোহস্তি সর্বদৈব মমাস্য চ ।
যোহসৌ সাহম্ অহং যাসৌ ভেদোহস্তি মতিবিভ্রমাৎ ।।
অর্থাৎ আমি ও ব্রহ্ম এক । উভয়ের মধ্যে ভেদ নাই । যিনি ব্রহ্ম তিনিই আমি । আমি যাহা, তিনিও তাহাই । ভেদ ভ্রমকল্পিত ( যারা ব্রহ্ম ও শক্তিতে ভেদ দেখেন। তাদিগের উদ্দেশ্যে বলা) , বাস্তব নহে ।
এই প্রসঙ্গে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলেছেন- “ ব্রহ্ম আর শক্তি অভেদ । এককে মানলেই আর একটিকে মানতে হয়। যেমন অগ্নি আর তার দাহিকাশক্তি;- অগ্নি মানলেই দাহিকাশক্তি মানতে হয় , দাহিকাশক্তি ছাড়া অগ্নি ভাবা যায় না; আবার অগ্নিকে বাদ দিয়ে দাহিকাশক্তি ভাবা যায় না। সূর্যকে বাদ দিয়ে সূর্যের রশ্মি ভাবা যায় না; সূর্যের রশ্মিকে ছেড়ে সূর্যকে ভাবা যায় না।
যখন জগত নাশ হয়, মহাপ্রলয় হয়, তখন মা সৃষ্টির বীজ সকল কুড়িয়ে রাখেন । গিন্নীর কাছে যেমন একটা ন্যাতা- ক্যাতার হাঁড়ি থাকে, আর সেই হাঁড়িতে গিন্নী পাঁচরকম জিনিস তুলে রাখে। ( কেশবের ও সকলের হাস্য )
(সহাস্যে)- “হ্যা গো! গিন্নীদের ওইরকম একটা হাঁড়ি থাকে। ভিতরে সমুদ্রের ফেনা, নীল বড়ি, ছোট- ছোট পুঁটলি বাঁধা শশাবিচি, কুমড়াবিচি, লাউবিচি- এই সব রাখে, দরকার হলে বার করে । মা ব্রহ্মময়ী সৃষ্টি নাশের পর ওইরকম সব বীজ কুড়িয়ে রাখেন। সৃষ্টির পর আদ্যাশক্তি জগতের ভিতরেই থাকেন ! জগৎপ্রসব করেন, আবার জগতের মধ্যে থাকেন। বেদে আছে ‘উর্ণনাভির’ কথা ; মাকড়সা আর তার জাল। মাকড়সা ভিতর থেকে জাল বার করে, আবার নিজে সেই জালের উপর থাকে। ঈশ্বর জগতের আধার আধেয় দুই ।
“কালী কি কালো ? দূরে তাই কালো, জানতে পারলে কালো নয় ।
“আকাশ দূর থেকে নীলবর্ণ । কাছে দেখ কোন রঙ নাই। সমুদ্রের জল দূর থেকে নীল, কাছে গিয়ে হাতে তুলে দেখ, কোন রঙ নাই।”
আদ্যাশক্তি লীলাময়ী; সৃষ্টি- স্থিতি- প্রলয় করছেন । তাঁরই নাম কালী। কালীই ব্রহ্ম, ব্রহ্মই কালী! একই বস্তু, যখন তিনি নিস্ক্রিয়- সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় কোন কাজ করছেন না- এই কথা যখন ভাবি, তখন তাঁকে ব্রহ্ম বলে কই । যখন তিনি এই সব কার্য করেন, তখন তাঁকে কালী বলি, শক্তি বলি। একই ব্যাক্তি নাম- রূপভেদ।”
যিনি অখণ্ড সচ্চিদানন্দ তিনিই কালী ।
( শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত )
রামপ্রসাদ সেন একটি গানে গেয়েছেন-
যত শোন কর্ণপুটে সকল মায়ের মন্ত্র বটে ।
কালী পঞ্চাশৎ বর্ণময়ী , বর্ণে বর্ণে নাম ধরে ।।
কালী বাগীশ্বরী, শব্দব্রহ্মময়ী । তাঁর কন্ঠের পঞ্চাশৎ মুণ্ড বস্তুতঃ পঞ্চাশৎ বর্ণমালার প্রতীক । কামধেনু তন্ত্রে স্বয়ং মা নিজেই এর পরিচয় দিয়ে বলেছেন- “মম কন্ঠে স্থিতং বীজং পঞ্চাশদ্ বর্ণমদ্ভুতম্ ।” কন্ঠের মুণ্ডমালা সংস্কৃত সেই বর্ণমালার প্রতীক । কন্ঠ হোলো আকাশতত্ত্বের ভূমি । আকাশ তত্ত্বের সাথে শব্দ তত্ত্বের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ । আকাশ তত্ত্বের প্রতীক মায়ের শ্রীকন্ঠের ভূষণ তাই শব্দ তত্ত্বের স্মারক বর্ণমালা । জগতের বেদ বেদান্ত – তন্ত্রাদি সকল অধ্যাত্ম জ্ঞানমূলক শাস্ত্র নানা লৌকিক বিদ্যার প্রকাশ ও প্রচারণা- বর্ণমালা বা শব্দের সাহায্যেই হয় । মানবদেহে এই জ্ঞান কেন্দ্র হলো মেধা বা মস্তিস্ক । সুতরাং দেবী কালীর কণ্ঠভূষণ লৌকিক ও অতিলৌকিক নিখিল জ্ঞানরাশি সম্যক্ সমাহার । দেবী স্বয়ং চিৎস্বরূপা সুতরাং তাঁর কণ্ঠভূষণ চিন্ময় উপাদানেই নির্মিত ।
আদ্যাশক্তি জীবের জীবভাব হরণ করে শিবত্ব প্রদান করেন। জীব অজ্ঞানে তাঁর স্বরূপ ভুলে যায়, এই পরিস্থিতিতে জীবকে যদি শোনানো হয়- 'তুমি পাপী, তুমি অধম' তাহলে সেই জীব আরোও অন্ধকারে তলিয়ে যায়। কালী উপাসনায় সেই অজ্ঞানতার নাশ হয়। মা কালী তাঁর জ্ঞান খড়্গ দিয়ে জীবের অজ্ঞানতা নাশ করেন। তাই অমাবস্যায় ঘোর অন্ধকারে শ্মশানে হয় মায়ের পূজো। মা আলোক মূর্তি ধরে সকল তমসা হরণ করেন। তাই তিঁনি মহাতামসী দেবী। সৃষ্টির আদিতে তিঁনি ছিলেন, অন্তেও তিঁনি থাকবেন । শুধু কি অজ্ঞান ভাব মোচন হয় ? মা কালী শক্তির দেবী । শক্তির উপাসনায় শত্রু বিজয় হয় । তাইতো শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বলা হয় তিঁনি ঈশ্বরের ঈশ্বরী। কালিকাপুরাণে বলা হয়, সেই মহাদেবী একাই নিখিল জগতের কারণ । কিছু মূর্খ লোকজন আছে তাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণ, বামাখ্যাপা, স্বামী বিবেকানন্দের ন্যায় ব্রহ্মজ্ঞ মহাপুরুষের বানী অমান্য করে নিজের মত চালায়।
যে কাল সর্ব জীবের গ্রাসকারী , সেই কালেরও যিনি গ্রাসকারীনি , মহানির্বাণ তন্ত্র বলেন তিনিই কালী – আদ্যাশক্তি ।
কলনাৎ সর্বভূতানাং মহাকালঃ প্রকীত্তিরত ।
মহাকালস্য কলনাৎ ত্বমাদ্যা কালিকা পরা ।
দেবীভাগবতপুরাণে বলে-
সদৈকত্বং ব ভেদোহস্তি সর্বদৈব মমাস্য চ ।
যোহসৌ সাহম্ অহং যাসৌ ভেদোহস্তি মতিবিভ্রমাৎ ।।
অর্থাৎ আমি ও ব্রহ্ম এক । উভয়ের মধ্যে ভেদ নাই । যিনি ব্রহ্ম তিনিই আমি । আমি যাহা, তিনিও তাহাই । ভেদ ভ্রমকল্পিত ( যারা ব্রহ্ম ও শক্তিতে ভেদ দেখেন। তাদিগের উদ্দেশ্যে বলা) , বাস্তব নহে ।
এই প্রসঙ্গে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলেছেন- “ ব্রহ্ম আর শক্তি অভেদ । এককে মানলেই আর একটিকে মানতে হয়। যেমন অগ্নি আর তার দাহিকাশক্তি;- অগ্নি মানলেই দাহিকাশক্তি মানতে হয় , দাহিকাশক্তি ছাড়া অগ্নি ভাবা যায় না; আবার অগ্নিকে বাদ দিয়ে দাহিকাশক্তি ভাবা যায় না। সূর্যকে বাদ দিয়ে সূর্যের রশ্মি ভাবা যায় না; সূর্যের রশ্মিকে ছেড়ে সূর্যকে ভাবা যায় না।
যখন জগত নাশ হয়, মহাপ্রলয় হয়, তখন মা সৃষ্টির বীজ সকল কুড়িয়ে রাখেন । গিন্নীর কাছে যেমন একটা ন্যাতা- ক্যাতার হাঁড়ি থাকে, আর সেই হাঁড়িতে গিন্নী পাঁচরকম জিনিস তুলে রাখে। ( কেশবের ও সকলের হাস্য )
(সহাস্যে)- “হ্যা গো! গিন্নীদের ওইরকম একটা হাঁড়ি থাকে। ভিতরে সমুদ্রের ফেনা, নীল বড়ি, ছোট- ছোট পুঁটলি বাঁধা শশাবিচি, কুমড়াবিচি, লাউবিচি- এই সব রাখে, দরকার হলে বার করে । মা ব্রহ্মময়ী সৃষ্টি নাশের পর ওইরকম সব বীজ কুড়িয়ে রাখেন। সৃষ্টির পর আদ্যাশক্তি জগতের ভিতরেই থাকেন ! জগৎপ্রসব করেন, আবার জগতের মধ্যে থাকেন। বেদে আছে ‘উর্ণনাভির’ কথা ; মাকড়সা আর তার জাল। মাকড়সা ভিতর থেকে জাল বার করে, আবার নিজে সেই জালের উপর থাকে। ঈশ্বর জগতের আধার আধেয় দুই ।
“কালী কি কালো ? দূরে তাই কালো, জানতে পারলে কালো নয় ।
“আকাশ দূর থেকে নীলবর্ণ । কাছে দেখ কোন রঙ নাই। সমুদ্রের জল দূর থেকে নীল, কাছে গিয়ে হাতে তুলে দেখ, কোন রঙ নাই।”
আদ্যাশক্তি লীলাময়ী; সৃষ্টি- স্থিতি- প্রলয় করছেন । তাঁরই নাম কালী। কালীই ব্রহ্ম, ব্রহ্মই কালী! একই বস্তু, যখন তিনি নিস্ক্রিয়- সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় কোন কাজ করছেন না- এই কথা যখন ভাবি, তখন তাঁকে ব্রহ্ম বলে কই । যখন তিনি এই সব কার্য করেন, তখন তাঁকে কালী বলি, শক্তি বলি। একই ব্যাক্তি নাম- রূপভেদ।”
যিনি অখণ্ড সচ্চিদানন্দ তিনিই কালী ।
( শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত )
রামপ্রসাদ সেন একটি গানে গেয়েছেন-
যত শোন কর্ণপুটে সকল মায়ের মন্ত্র বটে ।
কালী পঞ্চাশৎ বর্ণময়ী , বর্ণে বর্ণে নাম ধরে ।।
কালী বাগীশ্বরী, শব্দব্রহ্মময়ী । তাঁর কন্ঠের পঞ্চাশৎ মুণ্ড বস্তুতঃ পঞ্চাশৎ বর্ণমালার প্রতীক । কামধেনু তন্ত্রে স্বয়ং মা নিজেই এর পরিচয় দিয়ে বলেছেন- “মম কন্ঠে স্থিতং বীজং পঞ্চাশদ্ বর্ণমদ্ভুতম্ ।” কন্ঠের মুণ্ডমালা সংস্কৃত সেই বর্ণমালার প্রতীক । কন্ঠ হোলো আকাশতত্ত্বের ভূমি । আকাশ তত্ত্বের সাথে শব্দ তত্ত্বের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ । আকাশ তত্ত্বের প্রতীক মায়ের শ্রীকন্ঠের ভূষণ তাই শব্দ তত্ত্বের স্মারক বর্ণমালা । জগতের বেদ বেদান্ত – তন্ত্রাদি সকল অধ্যাত্ম জ্ঞানমূলক শাস্ত্র নানা লৌকিক বিদ্যার প্রকাশ ও প্রচারণা- বর্ণমালা বা শব্দের সাহায্যেই হয় । মানবদেহে এই জ্ঞান কেন্দ্র হলো মেধা বা মস্তিস্ক । সুতরাং দেবী কালীর কণ্ঠভূষণ লৌকিক ও অতিলৌকিক নিখিল জ্ঞানরাশি সম্যক্ সমাহার । দেবী স্বয়ং চিৎস্বরূপা সুতরাং তাঁর কণ্ঠভূষণ চিন্ময় উপাদানেই নির্মিত ।
আদ্যাশক্তি জীবের জীবভাব হরণ করে শিবত্ব প্রদান করেন। জীব অজ্ঞানে তাঁর স্বরূপ ভুলে যায়, এই পরিস্থিতিতে জীবকে যদি শোনানো হয়- 'তুমি পাপী, তুমি অধম' তাহলে সেই জীব আরোও অন্ধকারে তলিয়ে যায়। কালী উপাসনায় সেই অজ্ঞানতার নাশ হয়। মা কালী তাঁর জ্ঞান খড়্গ দিয়ে জীবের অজ্ঞানতা নাশ করেন। তাই অমাবস্যায় ঘোর অন্ধকারে শ্মশানে হয় মায়ের পূজো। মা আলোক মূর্তি ধরে সকল তমসা হরণ করেন। তাই তিঁনি মহাতামসী দেবী। সৃষ্টির আদিতে তিঁনি ছিলেন, অন্তেও তিঁনি থাকবেন । শুধু কি অজ্ঞান ভাব মোচন হয় ? মা কালী শক্তির দেবী । শক্তির উপাসনায় শত্রু বিজয় হয় । তাইতো শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বলা হয় তিঁনি ঈশ্বরের ঈশ্বরী। কালিকাপুরাণে বলা হয়, সেই মহাদেবী একাই নিখিল জগতের কারণ । কিছু মূর্খ লোকজন আছে তাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণ, বামাখ্যাপা, স্বামী বিবেকানন্দের ন্যায় ব্রহ্মজ্ঞ মহাপুরুষের বানী অমান্য করে নিজের মত চালায়।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন