এই বলে সীতাদেবী পুত্রদ্বয়কে আশীর্বাদ করলেন। আনন্দে সীতাদেবীর চোখের জল বাধ মানলো না। বাল্মিকী মুনি সেই পুত্রদের দেখলেন । আশ্রমে যেনো আনন্দ পরিবেশ সৃষ্টি হল। দূর্বা দ্বারা আশীর্বাদ করে মুনি বললেন- “ইহাদের মধ্যে যে বালক প্রথম ভূমিষ্ঠ হয়েছেন তাহার নাম হইবে কুশ। ইহার কিঞ্চিৎ পর যে বালক ভূমিষ্ঠ হয়েছে তাহার নাম হবে লব। ইহারা সূর্য বংশী। ইহাদের দেহ থেকে সেই তেজ রাশি প্রকাশ পাচ্ছে।” বৃদ্ধা কাবেরী দেবী বললেন- “না জানি আমাদের বনদেবীর স্বামী কি করছেন ? তিঁনি এই পুত্রদ্বয়ের জন্মানোর সংবাদ শুনলে অতীব প্রীত হতেন।” বাল্মিকী মুনি বললেন- “এদের পিতা এইস্থানে অনুপস্থিত এটা দুর্ভাগ্যজনক । কিন্তু এই শিশুরা মায়ের স্নেহে লালিত পালিত হবে। আমাদের আশ্রমবাসীদের আদরে বয়োপ্রাপ্ত হইবে। আমি ইহাদিগকে সকল বিদ্যা প্রদান করবো। একদিন এমন সময় আসবে যে এই পুত্রদের বীরত্ব দেখে ইহাদের পিতা এখানে আসতে বাধ্য হবেন।” সীতাদেবীর পরিচয় আশ্রমের কেহই জানে না। মহর্ষি বাল্মিকী এই সত্য সকলের নিকট হতে গুপ্ত রেখেছিলেন । সীতাদেবী অতি গোপোনে মহর্ষিকে বললেন- “মহর্ষি! আপনি আমার পিতৃতুল্য। কৃপা করে আপনি অযোধ্যায় সংবাদ প্রেরণ করুন যে রঘুনাথের যমজ পুত্র সন্তান হয়েছে। তিঁনি ইহা শ্রবণ করে অতীব প্রসন্ন হবেন।” মহর্ষি বললেন- “পুত্রী জানকী! আমার ইচ্ছা হচ্ছে যে এখুনি নিজেই অযোধ্যা গিয়ে শ্রীরামচন্দ্রকে এই সংবাদ প্রদান করি । কিন্তু এই ঘটনার বিপরীত প্রভাব হতে পারে। কর্তব্যপরায়ণ রাজা শ্রীরামচন্দ্র যদি এই সংবাদ শুনে পুত্রদের দেখতে না আসেন এতে তুমি প্রচণ্ড শোক পাবে। পুত্রী, একদিন এই তপোবনে পিতাপুত্রের মিলন ঘটবে। তবে সেই সময় আসতে এখনও বিলম্ব আছে । এখন তোমাকে মাতার ন্যায় কর্ম করতে হবে। ঈশ্বর সন্তান ধারণ ও সন্তান এর জন্ম ও সন্তানের লালন পালনের ক্ষমতা কেবল নারীদিগকে দিয়েছেন। নারীর কর্তব্য হল তাঁর সন্তান কে সুশাসনে রাখা, লালিত পালিত করা, বীরের ন্যায় গড়ে তোলা। ইহাই আর্য্যা নারীর কর্তব্য। পুত্রী। এবার তোমার সন্তান দের শক্তিমান করে তোলো।”
সীতা বলল- “তাই হবে মহর্ষি। এই সন্তান দের আমি সেই যোগ্য করে তুলবো- যাহাদের বীরত্ব ত্রিলোকে ঘোষিত হবে। যাহারা অস্ত্র চালনায় নিপুন অথচ অন্তরে দয়াবান হবে। ইহারা আর্ত জনকে রক্ষা ও দুষ্টদিগের বিনাশ করবে। ইহাদের সামনে অযোধ্যার সেই সকল শক্তিশালী সেনারা পরাজিত হবে। একদিন এমন সময় আসবে যেদিন রঘুনাথ গর্বে পুত্রদের আলিঙ্গন করবেন । আমি আজ হইতে ইহাদিগের পিতা আবার ইহাদিগের মাতা।” পরদিন শত্রুঘ্ন সেনা সহিত আসলো। বিশাল অযোধ্যার সেনা আসছে। সকলে ভাবল বোধ হয় অযোধ্যার রাজা মৃগয়াতে আসছেন। কিন্তু এত সেনা নিয়ে কেন মৃগয়াতে আসবেন। কোটি কোটি সেনার কোলাহল, হস্তীর কম্পমান চলণের শব্দ, অশ্ব- রথের আওয়াজ শুনতে পেলেন । কাবেরীদেবী এসে বললেন- “পুত্রী সীতা! অযোধ্যার অনেক সেনা আসছে। তাহারা আজ এই আশ্রমে নিবাস করবেন।” শুনে সীতাদেবী ভাবলেন বোধ হয় প্রভু শ্রীরাম এত সমারোহ করে তাহাকেই নিতে এসেছেন। পুত্রদের জন্মানোর সংবাদ নিশ্চয়ই তাঁহার কর্ণে পৌছে গেছে। বোধ হয় অযোধ্যার লোকেরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু ভুল ভাঙ্গলো কাবেরীদেবীর কথায়। বৃদ্ধা জানালেন- “অযোধ্যার নৃপতি মহারাজ শ্রীরামচন্দ্রের ভ্রাতা শ্রীশত্রুঘ্ন আসছেন। তিনি মথুরার দুষ্ট দানব লবণ অসুরকে নাশ করার জন্য যাত্রা করেছেন।” শুনে সীতাদেবী ভাবলেন সর্বনাশ। যদি শত্রুঘ্ন এসে দেখে যে তিনি এই আশ্রমে আছেন, তবে যুদ্ধ ছেড়ে হয়তো তাহাকে নিয়ে অযোধ্যায় চলে যাবেন। তাহলে উপায় কি ? সীতাদেবী মহর্ষি বাল্মিকীর কাছে সকল ঘটনা শুনলেন। মহর্ষি বললেন- “পুত্রী! তোমার পুত্রদের আশীর্বাদ করবেন তোমার স্বামীর ভ্রাতা। ইহা বিধাতার ইচ্ছা। তোমার পুত্রেরা তাদের বংশ হতেই আশীর্বাদ পাবে। চিন্তা করো না, শত্রুঘ্নের সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে না ।” বাল্মিকী মুনির আশ্রমের সামনে অযোধ্যার সেনারা সারি সারি শিবির রচনা করলো। দূর হত দেখা গেলো জঙ্গলের মধ্যে ্কোটি কোটি শিবির ।
শত্রুঘ্ন এসে মহর্ষি বাল্মিকীর চরণে প্রণাম জানালেন। মহর্ষি তখন যুদ্ধ জয়ের আশীর্বাদ দিলেন। শত্রুঘ্ন কে আশ্রমে স্বাগত জানালো হল। শত্রুঘ্ন সেই সুন্দর তপোবন দেখতে লাগলেন । বাল্মিকী মুনি আশ্রমে এনে শত্রুঘ্ন কে বললেন- “হে রাজকুমার! আমাদের আশ্রমে বনদেবী নাম্নী এক সূর্যবংশী তেজস্বী নারী দুটি যমজ পুত্রের জন্ম দিয়েছে। সেই নারী স্বামী পরিত্যক্তা । আপনিও সূর্যবংশী । কৃপা করে তাহাদিগকে আশীর্বাদ করুন।” শত্রুঘ্ন বলল- “মহর্ষি! কর্তব্য পালনের জন্য আমার অগ্রজ মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র যখন তাঁহার স্ত্রীকে ত্যাগ করেছেন , তখন এইভাবে বহু নির্দোষী নারীকে শাস্তি পেতে হবে। সেই নিস্পাপ শিশু দুটি পিতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাবো যেনো সেই শিশু দুজন একদিন যেনো পিতার স্নেহ প্রাপ্তি করে। আমি অবশ্যই তাহাদিগকে আশীর্বাদ করবো।” মহর্ষি বাল্মিকী সেই শিশু যমজ পুত্রদের আনয়ন করলেন। শত্রুঘ্ন দেখলেন সেই শিশুদের। ফুলের ন্যায় কোমল, সর্ব সুন্দর শিশুদের গাত্র থেকে সূর্যের ন্যায় রশ্মি যেনো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। এক ঝলক দেখলে মনে হয় যেনো মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র ঐ দুটি শিশুর রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। শত্রুঘ্ন সেই শিশুদের ক্রোড়ে নিলেন। আহা এই বালক দুটিকে দেখলে যেনো সকল স্নেহ উজার করে বর্ষণ করতে ইচ্ছা হয়। মনে হয় নয়নের দুটি মণি। ইচ্ছা করছে সাথে নিয়ে রাজপ্রাসাদে রাখতে। ইহাদের মধ্যে নৃপতির লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। শত্রুঘ্ন সেই শিশুদের আশীর্বাদ করে বললেন- “পুত্র তোমরা দানে, কর্মে, শৌর্যে , বীর্যে অনেক বড় হও। একদিন যেনো তোমাদের হস্তে আমি পরাজিত হই- ইহাই কামনা করি। সূর্যবংশের নাম উজ্জ্বল হোক তোমাদের মাধ্যমে।” এই বলে শত্রুঘ্ন অনেক আশীর্বাদ করলেন । সীতাদেবী কুটিরে গোপোনে ছিলেন। তিঁনি কোনমতেই বাহিরে আসছিলেন না। তিঁনি দুর্গাদেবীর কাছে শত্রুঘ্নের বিজয়ের কামনা করে দেবীর আশীর্বাদী পুস্প কাবেরী দেবীর মাধ্যমে শত্রুঘ্নের নিকট প্রেরণ করলেন। একদিন সেখানে থেকে পর দিবস শত্রুঘ্ন সেনা সমেত বের হলেন লবণ অসুরের বিনাশের জন্য মথুরায় ।
( ক্রমশঃ )
সীতা বলল- “তাই হবে মহর্ষি। এই সন্তান দের আমি সেই যোগ্য করে তুলবো- যাহাদের বীরত্ব ত্রিলোকে ঘোষিত হবে। যাহারা অস্ত্র চালনায় নিপুন অথচ অন্তরে দয়াবান হবে। ইহারা আর্ত জনকে রক্ষা ও দুষ্টদিগের বিনাশ করবে। ইহাদের সামনে অযোধ্যার সেই সকল শক্তিশালী সেনারা পরাজিত হবে। একদিন এমন সময় আসবে যেদিন রঘুনাথ গর্বে পুত্রদের আলিঙ্গন করবেন । আমি আজ হইতে ইহাদিগের পিতা আবার ইহাদিগের মাতা।” পরদিন শত্রুঘ্ন সেনা সহিত আসলো। বিশাল অযোধ্যার সেনা আসছে। সকলে ভাবল বোধ হয় অযোধ্যার রাজা মৃগয়াতে আসছেন। কিন্তু এত সেনা নিয়ে কেন মৃগয়াতে আসবেন। কোটি কোটি সেনার কোলাহল, হস্তীর কম্পমান চলণের শব্দ, অশ্ব- রথের আওয়াজ শুনতে পেলেন । কাবেরীদেবী এসে বললেন- “পুত্রী সীতা! অযোধ্যার অনেক সেনা আসছে। তাহারা আজ এই আশ্রমে নিবাস করবেন।” শুনে সীতাদেবী ভাবলেন বোধ হয় প্রভু শ্রীরাম এত সমারোহ করে তাহাকেই নিতে এসেছেন। পুত্রদের জন্মানোর সংবাদ নিশ্চয়ই তাঁহার কর্ণে পৌছে গেছে। বোধ হয় অযোধ্যার লোকেরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু ভুল ভাঙ্গলো কাবেরীদেবীর কথায়। বৃদ্ধা জানালেন- “অযোধ্যার নৃপতি মহারাজ শ্রীরামচন্দ্রের ভ্রাতা শ্রীশত্রুঘ্ন আসছেন। তিনি মথুরার দুষ্ট দানব লবণ অসুরকে নাশ করার জন্য যাত্রা করেছেন।” শুনে সীতাদেবী ভাবলেন সর্বনাশ। যদি শত্রুঘ্ন এসে দেখে যে তিনি এই আশ্রমে আছেন, তবে যুদ্ধ ছেড়ে হয়তো তাহাকে নিয়ে অযোধ্যায় চলে যাবেন। তাহলে উপায় কি ? সীতাদেবী মহর্ষি বাল্মিকীর কাছে সকল ঘটনা শুনলেন। মহর্ষি বললেন- “পুত্রী! তোমার পুত্রদের আশীর্বাদ করবেন তোমার স্বামীর ভ্রাতা। ইহা বিধাতার ইচ্ছা। তোমার পুত্রেরা তাদের বংশ হতেই আশীর্বাদ পাবে। চিন্তা করো না, শত্রুঘ্নের সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে না ।” বাল্মিকী মুনির আশ্রমের সামনে অযোধ্যার সেনারা সারি সারি শিবির রচনা করলো। দূর হত দেখা গেলো জঙ্গলের মধ্যে ্কোটি কোটি শিবির ।
শত্রুঘ্ন এসে মহর্ষি বাল্মিকীর চরণে প্রণাম জানালেন। মহর্ষি তখন যুদ্ধ জয়ের আশীর্বাদ দিলেন। শত্রুঘ্ন কে আশ্রমে স্বাগত জানালো হল। শত্রুঘ্ন সেই সুন্দর তপোবন দেখতে লাগলেন । বাল্মিকী মুনি আশ্রমে এনে শত্রুঘ্ন কে বললেন- “হে রাজকুমার! আমাদের আশ্রমে বনদেবী নাম্নী এক সূর্যবংশী তেজস্বী নারী দুটি যমজ পুত্রের জন্ম দিয়েছে। সেই নারী স্বামী পরিত্যক্তা । আপনিও সূর্যবংশী । কৃপা করে তাহাদিগকে আশীর্বাদ করুন।” শত্রুঘ্ন বলল- “মহর্ষি! কর্তব্য পালনের জন্য আমার অগ্রজ মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র যখন তাঁহার স্ত্রীকে ত্যাগ করেছেন , তখন এইভাবে বহু নির্দোষী নারীকে শাস্তি পেতে হবে। সেই নিস্পাপ শিশু দুটি পিতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাবো যেনো সেই শিশু দুজন একদিন যেনো পিতার স্নেহ প্রাপ্তি করে। আমি অবশ্যই তাহাদিগকে আশীর্বাদ করবো।” মহর্ষি বাল্মিকী সেই শিশু যমজ পুত্রদের আনয়ন করলেন। শত্রুঘ্ন দেখলেন সেই শিশুদের। ফুলের ন্যায় কোমল, সর্ব সুন্দর শিশুদের গাত্র থেকে সূর্যের ন্যায় রশ্মি যেনো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। এক ঝলক দেখলে মনে হয় যেনো মহারাজ শ্রীরামচন্দ্র ঐ দুটি শিশুর রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। শত্রুঘ্ন সেই শিশুদের ক্রোড়ে নিলেন। আহা এই বালক দুটিকে দেখলে যেনো সকল স্নেহ উজার করে বর্ষণ করতে ইচ্ছা হয়। মনে হয় নয়নের দুটি মণি। ইচ্ছা করছে সাথে নিয়ে রাজপ্রাসাদে রাখতে। ইহাদের মধ্যে নৃপতির লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। শত্রুঘ্ন সেই শিশুদের আশীর্বাদ করে বললেন- “পুত্র তোমরা দানে, কর্মে, শৌর্যে , বীর্যে অনেক বড় হও। একদিন যেনো তোমাদের হস্তে আমি পরাজিত হই- ইহাই কামনা করি। সূর্যবংশের নাম উজ্জ্বল হোক তোমাদের মাধ্যমে।” এই বলে শত্রুঘ্ন অনেক আশীর্বাদ করলেন । সীতাদেবী কুটিরে গোপোনে ছিলেন। তিঁনি কোনমতেই বাহিরে আসছিলেন না। তিঁনি দুর্গাদেবীর কাছে শত্রুঘ্নের বিজয়ের কামনা করে দেবীর আশীর্বাদী পুস্প কাবেরী দেবীর মাধ্যমে শত্রুঘ্নের নিকট প্রেরণ করলেন। একদিন সেখানে থেকে পর দিবস শত্রুঘ্ন সেনা সমেত বের হলেন লবণ অসুরের বিনাশের জন্য মথুরায় ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন